প্রথম পর্বঃ শক্‌ড অ্যাব্রোড - ০১

প্রথম পর্বের ভুমিকাঃ
জুন ১৯৯৪। জীবনের প্রথম দেশের বাইরে ভ্রমন। বয়স ও অভিজ্ঞতা দুটোই অনেক কম। এখনকার মত চাইলেই দেশ-বিদেশের হাল হাকিকত জানা অত সহজ ছিলো না। যদিও আমার ইন্টারনেট ছিলো, কিন্তু তার জন্য আমাকে প্রথম দিকে হংকং, পরে ঢাকার আইএসপি-কে ডায়াল করতে হোত প্রতি মিনিট যদ্দুর মনে পড়ে যথাক্রমে ৬৫ ও ৪০ টাকা ফোনের বিল খরচ করে। তাই ই-মেল ছাড়া অন্য কাজে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রশ্নই ওঠে না।

সে রকম একটি সময়ে বিদেশ যাওয়া মানেই অনেকগুলো ধাক্কা খাওয়ার মত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হওয়া। তারই কয়েকটি সংক্ষেপে বলি।



শক # ৪

আইবিএম টাওয়ারে আমার ট্রেনিং চলছে। হোটেলের কাছেই, শুধু একটি বড় রাস্তা পার হতে হয়, বাকি সব ফিডার রোড। কাজেই হোটেল থেকে হেটেই যাওয়া আসা। প্রথমদিন বড় রাস্তাটি পার হবার জন্য দাঁড়িয়েছি চৌরাস্তার ট্রাফিক লাইটের গোড়ায়। বিপুল বেগে হুসহাস চলে যাচ্ছে ছোটবড় কত রকমের গাড়ি। একসময় পথচারী পার হবার লাইটটি জ্বলে উঠলো। কিন্তু তখনো ওদিক থেকে ঝড়ের মতো ধেয়ে আসছে নগর পরিবহনের বাসটি, নির্ঘাত আমি রাস্তা পেরোতে শুরু করলেই আমাকে চাপা দিয়ে দেবে। তাই দাঁড়িয়েই আছি। দেখলাম, না বাসটি ঠিকই লাইটের আগে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো। আমি ডানে বামে তারপর আবার ডানে চেয়ে রাস্তা পার হলাম। পরেরবার খেয়াল করলাম পথচারী পারাপারের লাইটটি জ্বলতেই অন্যরা গল্প করতে করতে নির্ভয়ে পেরিয়ে যায়, তাকায়ও না ওদিক থেকে কোন দ্রুতগামী গাড়ি আসছে কিনা। যেন জানে ওরা থামবেই। কি আজব দেশ!

শক # ৫

আমি ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান ও আমিরাত থেকে মোট ৭ জন উপস্থিত ট্রেনিংয়ের জন্য। কাজেই অফিসে ৭টি অতিরিক্ত বসার স্থান দরকার। আগে থেকে তা করাও ছিলো না। প্রথম দিন অফিসে পৌঁছতেই স্থানীয় ট্রেনিং ম্যানেজার বললো তোমাদের বসার জায়গা ঠিক করতে হবে। এসো আমার সাথে। স্টোররুমের মত একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে দিলো অনেক টেবিল চেয়ার, বললো পছন্দ করে যার যার মতো টেবিল চেয়ার নিয়ে আসো। আরে! বলে কি লোকটা!! বাংলাদেশে আমার টেবিল চেয়ার কম্পিউটার টানাটানির জন্য দুইজন পিয়ন আছে, আর এখানে আমি টানবো টেবিল? কি আজব দেশ!!

শক # ৬

অনেক রাতেও চা পানের অভ্যাস আমার। রাত ১ টায় হঠাৎ নেশা চাপলো। রুম সার্ভিসকে জ্বালাতন করতে ইচ্ছা হোল না, রুমে সরঞ্জাম আছে, বানাতেও ভাল লাগছেনা। ভাবলাম কোন দোকানের সন্ধান করি, একটু ঘুরেও আসা হবে। যেই ভাবা, সেই কাজ। রাতের নির্জন কমর্শিয়াল ডিস্ট্রিক্ট। একদম একা হেটে হেটে অনেকটা দুরে এসে একটা স্টোরমতো পেয়ে গেলাম, চাও পেলাম। শেষ করে ফেরার পথে ভুত দেখলেও এত চমকাতাম না, একটি মেয়ে, বয়স আন্দাজ করা যায়না, হাটার ধরণে তরূনী বলেই মনে হোল, আমার ১০ গজ সামনেই হেটে যাচ্ছে। সিঙ্গাপুরের রাস্তায় তাও আবার কমার্শিয়াল ডিস্ট্রিক্টে বিশেষ পেশার কেউ হাটবে না নিশ্চিত জানি। তার মানে সাধারণ কোন কর্মজীবি মেয়ে সান্ধ্য শিফট শেষ করে হয়তো বাড়ি ফিরছে, বা আমারই মতো কিছু কিনতে বেরিয়েছিল। কিন্তু মেয়েটির কোন ভয় নেই কেন? কি আজব দেশ!!!

[ প্রিয় পাঠক, আসলেই কি সিঙ্গাপুর আজব দেশ? নাকি আমি অত্যন্ত অগোছালো এবং বিশৃংখল একটি দেশ থেকে গিয়েছি বলে আমার মনে হোল 'কি আজব দেশ!'? একবার ভাবুন। ]

(অসমাপ্ত)

0 comments:

Post a Comment