জুন ১৯৯৪। জীবনের প্রথম দেশের বাইরে ভ্রমন। বয়স ও অভিজ্ঞতা দুটোই অনেক কম। এখনকার মত চাইলেই দেশ-বিদেশের হাল হাকিকত জানা অত সহজ ছিলো না। যদিও আমার ইন্টারনেট ছিলো, কিন্তু তার জন্য আমাকে প্রথম দিকে হংকং, পরে ঢাকার আইএসপি-কে ডায়াল করতে হোত প্রতি মিনিট যদ্দুর মনে পড়ে যথাক্রমে ৬৫ ও ৪০ টাকা ফোনের বিল খরচ করে। তাই ই-মেল ছাড়া অন্য কাজে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রশ্নই ওঠে না।
সে রকম একটি সময়ে বিদেশ যাওয়া মানেই অনেকগুলো ধাক্কা খাওয়ার মত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হওয়া। তারই কয়েকটি সংক্ষেপে বলি।
শক # ১:
হার্বারভিউ ডাই ইচি হোটেল, ৮১ অ্যানসন রোড, সিঙ্গাপুর। ১৬ তলার নিজের রুম থেকে নেমে লবি পেরিয়ে বাইরে পোর্চে এসে দাড়িয়েছি ট্যাক্সি ধরবো বলে। আমাকে দেখেই বোধ হয়, ঘ্যাঁচ করে পাশে এসে দাড়ালোও একটি ট্যাক্সি। দরজার হাতলে হাত দিতে যাবো, তখনই পেছন থেকে কে যেন মুদু স্বরে বললো, "এক্সকিউজ আস প্লিজ! আমাদের ধারণা আমরা কিউতে তোমার আগে ছিলাম।" কিউ?!! সেটা আবার কি, ট্যাক্সি ধরবো যার আগে যে পারি, তার আবার কিউ কিসের!! না, মুখে বলিনি, মনে মনে ভাবছিলাম। যাহোক লজ্জিত হয়ে "খেয়াল করিনি, দুঃখিত" বলে তাদের দুজনকেই উঠতে দিলাম ট্যাক্সিতে। ফিরে এসে দাঁড়ালাম পোর্চে আরও কয়েকজনের পেছনে। কি আজব দেশ!!
শক # ২:
এটিও ট্যাক্সি নিয়েই। সন্ধ্যায় বেড়াবার জন্য কোথায় যেন গেলাম, ঠিক কোথায় তা আর এতদিন পর মনে নেই। যেতে যেতে ট্যাক্সির মিটার দেখছি আর ভাবছি এতগুলো ডলার?! গন্তব্যে পৌঁছে মুখ ফসকে বলেই বসলাম চালককে, তোমার কি মিটারটি ঠিক আছে, এত ডলারতো হবার কথা নয়? সে খুবই বিব্রত হয়ে বললো, "আমাদের মিটার নিয়মিত চেক করা হয়, গোলমালতো হবার কথা নয়। তবু তুমি যখন বলছো, আমি এখন চেক করিয়ে নিয়ে আসি, আগেরবার তোমার যত এসেছিলো এখন তাই দাও আমাকে।" এও কি সম্ভব?! কোন ঝগড়া-ঝাটি নেই, রাগ নেই, আমার কথাতেই মিটার দেখাতে রাজি হয়ে গেল? ভাড়াও আমার মর্জিমতো! কি আজব দেশ!!
শক # ৩:
আর্দ্রতার তারতম্যের কারণে যাওয়ার তৃতীয় দিনের মাথায় আমার ঠোট শুকিয়ে ফেটে ফেটে গেল, প্রায় রক্ত বেরিয়ে পড়ার উপক্রম। ভীষণ যন্ত্রনা। কি করি, কি করি!! খুঁজে বের করলাম একখানা ফার্মেসী, আশা অন্তত একটা কিছু ওষুধ-পত্র পাওয়া গেলে এ যাত্রা বাঁচি। কাউন্টারের ওপাশের ভদ্রলোককে অসুবিধার কথা জানিয়েই বললাম, "ওষুধ দাও।" তিনি বললেন, "প্রেস্ক্রিপশান দাও।" আরে! প্রেস্ক্রিপশান কোথায় পাবো? আমি কি ডাক্তার দেখিয়েছি নাকি? তোমার জানামত কিছু একটা দাও! বললো, "সরি, প্রেস্ক্রিপশান ছাড়াতো কোন ওষুধ আমি দিতে পারবোনা।" কি আশ্চর্য্য! প্রেস্ক্রিপশানতো লাগে দিনে কয়বার খাবো, ভরা পেটে না খালি পেটে তা জানার জন্য, কেনার জন্যও লাগে? মুখে বলিনি অবশ্য, যা বোঝার বুঝে গিয়েছি ততক্ষণে। কি আজব দেশ!!!
[ প্রিয় পাঠক, আসলেই কি সিঙ্গাপুর আজব দেশ? নাকি আমি অত্যন্ত অগোছালো এবং বিশৃংখল একটি দেশ থেকে গিয়েছি বলে আমার মনে হোল 'কি আজব দেশ!'? একবার ভাবুন। ]
(অসমাপ্ত)
Copyright 2010 সাইদুর রহমান চৌধুরী
Theme designed by Lorelei Web Design
Blogger Templates by Blogger Template Place | supported by One-4-All
0 comments:
Post a Comment