(আগের পর্বের ধারাবাহিকতায় রচিত। আগের পর্বটি পড়া না থাকলে এ পর্বটি বোধগম্য নাও হতে পারে।)
আগের পর্বের লিংকঃ জাতীয় পতাকার রং কি? জরীপ ও উপসংহার - পর্ব ১(২)
এতো গেল কাপড়ের পতাকার জটিলতা। কাগজের পতাকা বা পত্র-পত্রিকায় পতাকা ছাপানোর ক্ষেত্রে কি করতে হবে? ছাপার রং (কালি) কাপড় রঙাবার রং থেকে একেবারেই ভিন্ন। তাদের শেডের নামও ভিন্ন। অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদনকারীও ভিন্ন। ক্যানভাস বা মুরেলে পতাকা আকতে গেলে কি করতে হবে? তুলির রং (পেইন্ট) কাপড় বা ছাপার রং থেকে ভিন্ন, শেডের নাম বা উৎপাদনকারীও হয়তো ভিন্ন। কাজেই ছাপা বা আঁকার ক্ষেত্রে পতাকা বিধি থেকে প্রত্যক্ষ কোন সাহায্য / নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে না।
এবার আসি ডিজিটাল আর্ট ফর্মে। ডিজিটাল আর্ট ফর্ম সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি জগত। এখানে রংয়ের সঙ্গাই ভিন্ন। এত কিছু বলেছি, এ বিষয়টি না বললে পাঠকের প্রতি অবিচার করা হবে। রংয়ের দুটি জগৎ আছে - একটি রঞ্জক সম্পর্কিত (pigment), অন্যটি আলোক (optics) সম্পর্কিত। দুই জগতের দুই নিয়ম, বিপরীত নিয়ম। রঞ্জকের জগতে সকল মৌলিক রং মেশালে মিশ্রণের রং হয় কালো, আলোকের জগতে সকল মৌলিক রং মেশালে মিশ্রণের রং হয় সাদা। রঞ্জকের জগতে রঞ্জক যোগ করলে রং গাঢ় হতে থাকে, আলোকের জগতে আলোক যোগ করলে রং ফিকে হতে থাকে। ডিজিটাল আর্ট ফর্ম আলোকের জগতের বাসিন্দা, যতক্ষণ না তাকে প্রিন্ট করছি, প্রিন্ট করলেই সে চলে গেল রঞ্জকের জগতে। কম্পিউটার মনিটরে যে রং আমরা দেখি তা আলোক ছাড়া আর কিছুই না। লাল, সবুজ আর নীল (RGB) এই তিনটি মৌলিক রং দিয়ে বিশ্বের যাবতীয় রং সৃষ্টি (সাত রংয়ের ব্যাপারটি প্রাচীন ধারণা)।
মনিটরে দেখার উপযোগী ডিজিটাল আর্টে পতাকার সবুজ রং তৈরীর জন্য যদি টার্কোয়েজ আর ইয়েলো মিশাই কাজ হবে না। কারণ সেটি ছিলো রঞ্জকের জগতের নিয়ম। এখানে নিয়ম ঠিক উল্টো। তাছাড়া এখানে টার্কোয়েজ বা ইয়েলো বলে কিছু নেই। এখানে আছে লাল, নীল আর সবুজ (পতাকার যে সবুজ সে সবুজ নয়)। (পাদটীকাঃ যারা ফটোশপে (বা অন্য গ্রাফিক্স সফটঅয়্যারে) RGB ছাড়াও CMYK বা HSB মডেলে কাজ করেছেন, তারা আমার ঠিক আগের বক্তব্যটির প্রতিবাদ করতে চাইতে পারেন। কিন্তু আমি আমার বক্তব্যে অবিচল। শুধু সেই ব্যখ্যা এখানে দেয়া সম্ভব নয় বিধায় আপনাদের ভ্রুকুঞ্চণকে আপাতত অগ্রাহ্য করছি)।
তাহলে ডিজিটাল আর্টের ক্ষেত্রে আমরা পতাকার কোন রং ব্যবহার করবো? এর সহজ কোন উত্তর আমার জানা নেই। আমার কাছে মনে হয় সবচাইতে ভালো হয় সঠিকভাবে রঞ্জিত একটি কাপড়ের পতাকাকে স্ক্যানার বা ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে ডিজিটাইজ করে সেখান থেকে রংটি নির্দিষ্ট করা। এক্ষেত্রে অবশ্যই 'স্ট্যান্ডার্ড গ্রে-স্কেল শীট' দিয়ে ক্যামেরা বা স্ক্যানারকে ক্যালিব্রেট করে নিতে হবে, অন্যথায় কাপড়ের সঠিক রংটি কম্পিউটারে যাবে না, সেখানে অনাকাঙ্খিত বর্ণচ্ছটা থেকেই যাবে (ক্যামেরার ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য)।
এখানে উল্লেখ্য যে, পতাকা বিধি, ১৯৭২ এ একটি পতাকার ছবি সংযোজন করা হয়েছে। আপতত এটিকেই আমাদের রাষ্ট্রীয় স্ট্যান্ডার্ড হিসাবে ধরতে হবে, যতদিন না 'ডিজিটাল বাংলাদেশে'র জন্য একটি 'ডিজিটাল স্ট্যান্ডার্ড' আমরা পাচ্ছি। (সরকারের যারা এসব বিষয় মূলত দেখাশোনা করে থাকেন সেসব আমলা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অদূর ভবিষ্যতে একটি ডিজিটাল পতাকার মান পাওয়া আমার কাছে দূরাশা মাত্র)। তাই আমি রাস্ট্রীয় দলিলে পাওয়া ছবি থেকে যথাসম্ভব যত্ন ও নির্ভূলতা বজায় রেখে একটি মান পেয়েছি, এবং সে অনুযায়ী একটি ডিজিটাল পতাকা তৈরী করেছি। আপনাদের দেখার জন্য সরকারী নমূনা ও আমার নমূনা দুটি নিচে দিলাম।
সরকারী নমূনা
আমার নমূনা
(আগ্রহীদের জন্য পরবর্তী একটি পোস্টে ডিজিটাল পতাকা তৈরীর টিউটোরিয়াল দেয়ার ইচ্ছা রাখি)
Copyright 2010 সাইদুর রহমান চৌধুরী
Theme designed by Lorelei Web Design
Blogger Templates by Blogger Template Place | supported by One-4-All
1 comments:
We love our National Flag!!!!!!!!!!!
December 8, 2011 at 12:28 AMPost a Comment