পুরনো পর্বঃ
শক্ড অ্যাব্রোড - ০১ | শক্ড অ্যাব্রোড - ০২ | শক্ড অ্যাব্রোড - ০৩
প্রথম পর্বের ভুমিকাঃ
জুন ১৯৯৪। জীবনের প্রথম দেশের বাইরে ভ্রমন। বয়স ও অভিজ্ঞতা দুটোই অনেক কম। এখনকার মত চাইলেই দেশ-বিদেশের হাল হাকিকত জানা অত সহজ ছিলো না। যদিও আমার ইন্টারনেট ছিলো, কিন্তু তার জন্য আমাকে প্রথম দিকে হংকং, পরে ঢাকার আইএসপি-কে ডায়াল করতে হোত প্রতি মিনিট যদ্দুর মনে পড়ে যথাক্রমে ৬৫ ও ৪০ টাকা ফোনের বিল খরচ করে। তাই ই-মেল ছাড়া অন্য কাজে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রশ্নই ওঠে না। সে রকম একটি সময়ে বিদেশ যাওয়া মানেই অনেকগুলো ধাক্কা খাওয়ার মত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হওয়া। তারই কয়েকটি সংক্ষেপে বলি।
এ পর্বের ভুমিকাঃ
দেশের বাইরে ভদ্রতা, সভ্যতা, নিয়মানুবর্তিতা এসব ভালো ভালো জিনিস দেখে আমার এই শক পাওয়া আর তার বিবরন তুলে ধরতে যে নিজেরও ভালো লাগছিলো তা নয়। কিন্তু যা সত্যি শুধু দেশপ্রেমের দোহাই দিয়ে তাকে অস্বীকারই বা করি কি করে? তারপরও নিজের দেশকে ছোট দেখাতে ভালো লাগেনা। তাই স্মৃতির গহীন হাতড়ে বের করতে চাইলাম কোন কোন ঘটনায় আহত হয়েছি বিদেশীদের মন্দরূপ দেখতে পেয়ে। জানি তেমন বেশি ঘটেনি আমার অভিজ্ঞতায়, তবু খুঁজে পেলাম কয়েকটি।
শক # ১০
বসু বিজ্ঞান মন্দিরে গিয়েছি সাত দিনের জন্য। কাজের অবসরে কলকাতার রাস্তায় এদিক সেদিক ঘুরি। সাথে প্রায় সার্বক্ষণিক সঙ্গী সেখানকার একজন গবেষক। ঘোরাঘুরিতে যখন যা মন চায় খাই - ভাঁড়ের চা থেকে ইডলি-দোসা সবই। ভদ্রতা করে ইনসিস্ট করতে গিয়ে প্রতিবারই বিল মেটাই আমি। নিজের অজান্তেই এই অভদ্র প্রশ্নটি মনে উঁকি দিয়ে যায়, সে কি আমাকে একবারও খেতে বলবে না তার মেটানো বিলে? একদিন বিকেলে সল্টলেক সিটিতে হাটছি, হঠাৎ সে অনতিদূরের একটি ছোট্ট দোতলা বাড়ি দেখিয়ে বললো, দাদা, ঐ যে দেখছেন বাড়িটা, ওটাই আমাদের। ভাবলাম, আচ্ছা, বাড়িতে নিয়ে যাবে বলেই এ কয়দিন আমার বিল মেটায় নি! কিন্তু না, স্বচ্ছন্দেই বাড়িটা পেরিয়ে এলো আমাকে রেস্টহাউজে পৌঁছে দেয়ার জন্য। অথচ কি অবলিলায় জানালো পরের বছর টেকনাফে যাবার পথে চট্টগ্রামে আমার বাসাতে থাকবে। কী আজব!
শক # ১১
সিঙ্গাপুর রিভার (আসলে একটি নর্দমার সমান)-এর ধারে হাটছি সঙ্গিসহ। আমি তার ছবি তুলে দেই, সে আমার। কিন্তু দুজনে মিলে ছবি তুলতে পারছি না তৃতীয় কেউ সাথে নেই বলে। লোকজনও দেখছি না যে অনুরোধ করবো একটি ছবি তুলে দিতে। কোন কিছুর ওপর রেখে টাইমার দিয়ে ছবি তুলবো সেরকমও যুতসই ব্যবস্থা পাচ্ছি না। অগত্যা হেটে চলে এলাম ফুনান সেন্টার নামের শপিং মলের সামনে, এখানে লোকজন পাওয়া যাবেই। কিন্তু হায়! জনাদশেক মানুষকে অনুরোধ করলাম একটি ছবি তুলে দিতে, বেশিরভাগই দুঃখিত বললো, কয়েকজন তাও না বলে এড়িয়ে গেল। কি আজব!!
শক # ১২
থাইল্যান্ডে দ্বিতীয় দফা এলাম একটি ওয়র্কশপ করতে। আয়োজক বৃটিশ অর্থায়নে বাংলাদেশে পরিচালিত একটি শিক্ষা উন্নয়নমূলক প্রকল্প, সমন্বয়কারী বৃটিশ নাগরিক। হোটেলের খরচ বহন করবে প্রকল্প। বিশেষ ডিনারগুলো বাদে বাকি সময়ের খাবার নিজের খরচে। থাইল্যান্ডে ৩ বেলা খাবারের মোট খরচ ৫ ডলারের
উর্ধ্বে নয়, তবু প্রতিদিন ৫০ ডলার করে সাবসিস্টেন্স অ্যালাওয়েন্স দেয়া হবে, ২৫ দিনের মোট ১২৫০ ডলার। ডলারই ট্রান্সফার করে এনেছে বৃটিশ সমন্বয়কারী, কাজেই ডলারগুলো আমাদের দিয়ে দিলে আমরা পাশেই ব্যাংক, সেখান থেকে ভাঙ্গিয়ে নিতে পারি যখন যেটুকু দরকার, যার দরকার নেই সে না ভাঙ্গালেও হয়। কিন্তু ভদ্রলোক তা করলেন না, তিনি ২২ জন অংশগ্রহনকারীর সর্বমোট ২৭৫০০ ডলার নিজেই ভাঙ্গিয়ে নিয়ে আসলেন, সেদিনকার ব্যাংক রেটের চেয়ে ২ বাথ করে কম দিলেন আমাদের। দাবী করলেন ওটাই ব্যাংক রেট, আর আমাদের স্বাক্ষর নিলেন ডলারের অংকের বিপরীতে। ঐ দিন তিনি 'উপার্জন' করলেন ৫৫,০০০ বাথ। কি আজব!!!
Copyright 2010 সাইদুর রহমান চৌধুরী
Theme designed by Lorelei Web Design
Blogger Templates by Blogger Template Place | supported by One-4-All
0 comments:
Post a Comment