সুপ্রিয় ব্লগার ও পাঠক,
ঈদ মোবারক। আপনাদের ঈদের দিনটি ভালো কেটেছে আশা করি। মুসলিমদের ঘরে ঘরে নিজের বা অন্যের কোরবানীর পশুর মাংসও মজা করে খাওয়া দাওয়া হচ্ছে নিশ্চয়ই। দুর বিদেশে নিজে যে আনন্দে অংশগ্রহন করতে পারছিনা, আপনাদের আনন্দের কথা ভেবে তা ভুলে থাকারও চেষ্টা করছি।
আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়ত আছেন, যাদের হৃদয় অতি কোমল, তারা কোরবানীর পশু জবাইয়ের দৃশ্য সহ্য করতে পারেন না। এমনও কেউ কেউ আছেন, যারা মাংস সামনে দেখলে অসহায় পশুটির কথা মনে করে তা আর খেতেও পারেন না। অন্যের কথা বলি কেন, আমার নিকটাত্মীয়ের মধ্যেই এরকম দু'একজন আছে। এই কোমলমতি মানুষগুলোকে আপতত সহানুভূতি জানান ছাড়া আর কি করতে পারি ভেবে পাইনা। মনের ভেতর তাদের জন্য একধরনের ভালবাসা অনুভব করি।
দৃশ্যত আরেক রকমের মানুষ আছেন যারা কোরবানীর পুরো বিষয়টিকে একটি পাশবিক ও বিভৎস আচার হিসাবে চিত্রিত করে থাকেন। ভারত ও নেপালে সনাতন ধর্মের কোন কোন মন্দিরে বা কোন বিশেষ পূজা-পার্বণে পশুপাখি বলি দেয়ার আচারটিকেও তারা অভিন্ন দৃষ্টিতেই দেখেন। কাজেই তাদেরকে সরাসরি ইসলাম বা মুসলিম বিদ্বেষী বলারও কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। লেখালেখি ও প্রচারের মূল উদ্দেশ্য যাই থাক, সাধারণত তারা নিজেদের পশ্চিমা ধাঁচের প্রাণিপ্রেম উদ্বুদ্ধ ভাবতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। এদের অনেকেই পশ্চিমা দেশে হয় থাকেন, নয় শিক্ষাদীক্ষা করেছেন, নিদেন ভ্রমন করেছেন বা পশ্চিমা মিডিয়া দিয়ে প্রভাবিত।
কেমন এই পশ্চিমা পশুপ্রেম? একটি উদাহরণ দিলে তার অন্তত একটি দিক বোঝা সহজ হবে। ইরাকের যুদ্ধে নিযুক্ত এক মার্কিন সৈনিক একটি কুকুর পুষলেন সেখানে, ইরাকী কুকুর। দেশে ফিরে আসার সময় তিনি কুকুরটি সাথে নিতে চাইলেন, কিন্তু সামরিক ও কাস্টম্স্ কর্তৃপক্ষ অনুমতি না দেয়ায় তা আর হয়নি। এ নিয়ে মার্কিন মিডিয়ায় হইচই, জনমত চলে গেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। কর্তৃপক্ষের অপরাধ? একটি অবলা জীবকে তার মালিকের সাথে বসবাসের অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কাজেই হাজারে হাজারে ভোট পড়তে লাগল পূণর্মিলনীর পক্ষে। শেষমেশ কর্তৃপক্ষ বাধ্য হলেন পশুটিকে তার মালিকের কাছে যেতে দিতে। জয়, পশুপ্রেমের জয়! কিন্তু একটিবারও সৈনিকটিকে কেউ জিজ্ঞাসা করল না, 'কতজন নিরীহ ইরাকী তোমার গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে, বা পঙ্গু হয়েছে?'
এবার আসুন দেখি, পশ্চিমা 'স্ক্র্যাম্বল্ড্ এগ' দিয়ে নাস্তা করতে করতে যিনি পশুপ্রেমের কারণে নিবন্ধ লিখছেন তিনি কি করছেন? প্রায় প্রতিটি শিল্পোন্নত দেশে অন্তত ৯৫ ভাগ ডিম ও মাংসের সরবরাহ আসে শিল্প কারখানা থেকে, খামার থেকে নয়। কারখানা এ জন্য বলছি যে, তা আসলেই কারখানা। মুরগির বাচ্চা ডিম থেকে ফুটে বের হবার পরই তাকে যন্ত্রের সাহায্যে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হা করিয়ে রাখা হয়, যন্ত্রের সাহায্যে তার গলার ভেতর উচ্চশক্তির ট্যাবলেটের মত খাবার ঢুকিয়ে দেয়া হয়, তার না থাকে কোন পালক, না থাকে দৃশ্যমান ডানা, না থাকে দৃশ্যমান পা। শুধুই মৃতপ্রায় থলথলে একটি মাংসপিন্ড। দিন পনের-বিশ পরে যন্ত্র এসে তার মাথাটি শুধু কেটে নিয়ে যায়। আরো দিনকতক পরে তা যখন সুপারস্টোরের ফ্রিজে বিক্রির জন্য আসে, পশুপ্রেমিক উঁচু দামে তার ডানা কিনে নিয়ে যায় মধু মাখিয়ে গ্রিল বা অন্য অংশ বারবিকিউ করবার জন্য।
আর ওই যে 'স্ক্র্যাম্বল্ড্ এগ'-এর ডিম, তার কি বিষয়? ডিমের খামারে (বা কারখানায়) নিষিক্ত ডিম থেকে লেয়ারের বাচ্চা ফুটিয়ে তাদের বড় করে তোলা হয় আবার ডিম পাড়ার জন্য। খুবই ভালো কথা। তবে কথা থেকেই যায়, মুরগী না হয় বড় হয়ে ডিম পাড়বে, কিন্তু মোরগরা কি করবে? প্রতি দুটি বাচ্চার একটি যে মোরগ! আপনার মনে হতে পারে ওদেরকে মাংসের জন্য বড় করা হয়, কিন্তু ভুল। প্রতিটি বাচ্চা ছেলে মোরগকে জ্যান্ত ছুড়ে ফেলা হয় আমদের ইট ভাঙার মেশিনের মত একটি মেশিনে, নয়তো ভাগাড়ে। সংখ্যায় তারা এক দুই নয়, কোটি কোটি। আমার কথা বিশ্বাস হল না? নিজেই দেখুন ছবিদু'টি, বা YouTube ভিডিওটি।
http://www.youtube.com/watch?v=JJ--faib7to
কি বলবেন? এই পশুপ্রেমিকদের আমাদের কোরবানী বা পাঠা বলি নিয়ে কিছু বলবার নৈতিক অধিকার কি আছে? অতএব, আমাদের যা আছে তা থেকে আনন্দ আহরনের চেষ্টা করুন। ভাল থাকুন।
ঈদ মোবারক।
Copyright 2010 সাইদুর রহমান চৌধুরী
Theme designed by Lorelei Web Design
Blogger Templates by Blogger Template Place | supported by One-4-All
0 comments:
Post a Comment