১৪.
দেশে যাবো দুমাসের জন্য, খামোখা ৭০ ডলার বিল কেন দেব, এই মনে করে ফোনটা ভ্যাকেশন ডিসকানেক্ট করিয়ে নিলাম, ফিরে এসে আবার চালু না করা পর্যন্ত সাময়িক বন্ধ। ফেরার পথে ঢাকা ছাড়ার আগের রাতে ফোন করে বললাম আমি কানাডা পৌঁছাবার আগেই ফোন চালু চাই, এখনি চালু করে দাও। বাজে লাইনের জন্য সব কথা ভালোমতো শুনতে পাইনি, শুধু বুঝলাম আমার ফোন চালু হয়েছে, তবে কিছু ব্যাপার আছে। বললাম, ঠিক আছে বাকি ব্যাপার পরে বুঝবো।
টরোন্টো পৌঁছেই টের পেলাম ব্যাপারটা হলো আমার শুধু ভয়েস কল করা ও রিসিভ করাটাই চালু হয়েছে; স্পার্ক১২ চালু হয়নি - তাই কলার আইডি, ইন্টারনেট, ভয়েস মেল, টেক্সট - এসব এখনো বন্ধ। উইনিপেগ ফিরে ধীরে সুস্থে ফোন করে বললাম, এবার স্পার্ক১২ টা চালু কর।
~ দুঃখিত, স্পার্ক১২ চালু করা যাচ্ছে না, কারণ ওটা আমাদের এখনকার অফারে নেই, ডিসকন্টিনিউড।
- কিন্তু আমিতো পুরনো কাস্টমার, আমার জন্য কেন ডিসকন্টিনিউড হবে?
~ এটাই আমাদের সিস্টেম, ভ্যাকেশন ডিসকানেক্ট থেকে ফিরলে কারেন্ট অফার থেকে প্যাকেজ নিতে হবে।
- খুব ভালো!! কি আছে এখন তোমাদের?
~ এখন আছে 'প্যাকেজ১৫', মাসে ১৫ ডলার, আগের সুবিধা সবই থাকবে শুধু ইন্টারনেট থাকবে না।
- এটা কেমন কথা? ৩ ডলার দাম বাড়লো, অথচ একটা গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা বাতিল হয়ে গেল?
~ একটা সুবিধা এখন বেশি পাবে, সেটা হলো ভয়েস মেল ৩ মেমোরী থেকে ১০ মেমোরী হয়ে যাবে।
- হুম! কিন্তু আমার নেট চাই।
~ তুমি যদি আরো ৪ ডলার যোগ কর, তাহলে তোমাকে লিমিটেড নেট অ্যাক্সেস দেয়া যায়।
বুঝলাম, এই পদ্ধতিতে কাজ হবে না, সরাসরি অফেন্সে যেতে হবে। বললাম, তুমি কি আমাকে বেকায়দায় ফেলে একটা দামী প্যাকেজ বিক্রি করার চেষ্টা করছো? তুমি জানো যে এটা অন্যায়।
এটা বলাতে একটু থতমত খেয়ে গেল সে। বলে নেই, এই সব কথোপকথন কিন্তু আইন অনুযায়ী রেকর্ড হচ্ছে, আমি কখনো মামলা করলে এই কথোপকথনের রেকর্ড তারা আদালতে হাজির করতে বাধ্য। একটু ভেবে বললো, কিন্তু আমিতো তোমাকে বিক্রির চেষ্টা করছিনা, আমাদের কি কি আছে তোমাকে জানালাম, নেয়া না নেয়া তোমার স্বাধীনতা।
- কিন্তু তুমিতো আমাকে একটার পর একটা অ্যাডিশনাল প্যাকেজের কথা বলে যাচ্ছো, আমার অসুবিধাটাকে তুমি এক্সপ্লয়েট করতে চাইছো। তোমার নাম বলো, আমি কনজ্যুমার্স রাইট্স কমিশনে কমপ্লেন করতে চাই।
আমি জানি কমপ্লেন করেও আমি কিছুই হয়তো পাবো না, কিন্তু কারো নামে কমপ্লেন হলে তার ক্যারিয়ারের বারোটা বাজবে। এটা মনে করেই এরপর সে নরম হয়ে গেল, বললো, ঠিক আছে, আমরা একটা সমাধান খুঁজতে পারি।
- কী সমাধান?
~ তুমি প্যাকেজ১৫ টা নিতে পারো, আর আমি তোমাকে আনলিমিটেড ইন্টারনেট দুবছরের জন্য কম্পানীর পক্ষ থেকে উপহার হিসাবে দিয়ে দেব; তবে কোনটাই কোনটার শর্ত নয়, জাস্ট বিজনেস রিলেশন হিসাবে এটা করা হবে।
বলাই বাহুল্য, আমার দরকষাকষিতে কাজ হয়েছে দেখে রাজি হয়ে গেলাম।
১৫.
হঠাৎ এক মাসে দেখি আমার বিল ২০ ডলার বেশি এলো। কেন অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখলাম, আমি নাকি একটা থার্ড পার্টি সার্ভিস সাবস্ক্রাইব করেছি। বলাই বাহুল্য আমার জানামতো আমি সেরকম কিছুই করিনি। মেজাজ খারাপ করে ফোন দিলাম, এটা কি সার্ভিস যা আমি সাবস্ক্রাইব করেছি দেখাচ্ছে? কী একটা নাম বললো, কী সব মিউজিক-টিউজিক।
- এই সার্ভিসের নামই এই প্রথম তোমার কাছে শুনলাম, সাবস্ক্রাইবতো দূরের কথা!
~ কিন্ত আমাদের সিস্টেম বলছে তুমি সাবস্ক্রাইব করেছো।
- কী আশ্চর্য!! ঠিক আছে, ওটা বন্ধ করে দাও।
~ আমরা বন্ধ করতে পারবোনা, তুমি যাদের সার্ভিস নিয়েছো তাদের বলতে হবে বন্ধ করার জন্য।
- আরে খোদা! নামই জানিনা আমি এই সার্ভিসের, কোথায় পাবো তাদের আমি?
~ তোমাকে আমি নামটা দিতে পারি, বাকিটা তোমাকেই খুঁজে নিতে
হবে।
বলাই বাহুল্য, সেদিন মেজাজটা খুবই খারাপ হয়েছে, ঝগড়াঝাটিও কম করিনি। কিন্তু ওপাশেও সেদিন ছিলো কোন এক 'হতচ্ছাড়ি', কিছুতেই তাকে বাগে আনতে পারলাম না। শেষমেষ তার দেয়া নাম গুগলে দিয়ে খুঁজে পেলাম সার্ভিসটি - লস অ্যাঞ্জেল্স ভিত্তিক এক কন্টেন্ট প্রোভাইডার; গান, রিংটোন এসব হাবিজাবি বেচে। ফোন দিলে বারবারই এক ব্যাটা ধরে শুধু স্প্যানিশে কথা বলে। মর জ্বালা! বললাম আমাকে একজন ইংরেজিভাষী দাও। শেষমেষ পেলাম একজন; বললাম বিষয়টা কী, কেন ফোন করেছি। জানতে চাইলাম, তোমাদের সার্ভিস আমার ফোনে কিভাবে সাবস্ক্রাইব হলো? এই প্রশ্নের কোন জবাব ঠিক ভাবে দিলো না ব্যাটা, বুঝলাম এরা কারসাজি করে কোনভাবে হ্যাকট্যাক করে এই কাজ করে যাচ্ছে, প্রযুক্তি ব্যবহার করে পকেটমারিং, দক্ষিণ আমেরিকান হতচ্ছাড়াগুলো আমেরিকায় কম নেই।
যাহোক এই নিয়ে বেশি ঘাটালামও না, আমার দরকার আনসাবস্ক্রাইবড হওয়া। সেটা করে দিলো, সাথে আমার ঠিকানা চাইলো আমাকে চেক পাঠাবার জন্য। দিন পনের পর দেখি সত্যিই আমার মেলবক্সে ২০ ডলার থেকে ডাকমাশুল বাদ দিয়ে বাকী টাকার একটা চেক পাঠিয়েছে।
মোবাইল মানেই যন্ত্রনা!!!!
১১.
এখানে এসেই যাদের সাথে উঠলাম তাদের দুজনেরই সেলফোন, এবং অ্যাপার্টমেন্টে ফিক্সড ফোন রাখা হয়নি। তাই তাৎক্ষণিক আমারো সেলফোনই দরকার হয়ে পড়লো। পরদিনই গেলাম বড় একটা ইলেকট্রনিক্স আউটলেটে। জিএসএম, সিডিএমএ - দুরকমের সার্ভিস প্রোভাইডারই আছে। প্রিপেড (পে-অ্যাজ-ইউ-গো) এবং পোস্টপেড (প্লান) দুরকমের আছে। পে-অ্যাজ-ইউ-গো ফোনগুলো দেশের মতোই রিচার্জ করে করে ব্যবহার - তবে স্বভাবতই খরচ বেশি। আর প্লান গুলো অবস্থা বুঝে সাশ্রয়ী। প্লান হতে পারে কোন প্রতিশ্রুতি ছাড়া, অর্থাৎ আমি যখন ইচ্ছা তখনই এই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে বলতে পারি। আবার হতে পারে ১, ২ বা ৩ বছর মেয়াদে চুক্তিবদ্ধ; অর্থাৎ মেয়াদপূর্তির আগে আমি ফোন ছাড়তে পারবো না। ছাড়লে মেয়াদপূর্তির যত মাস অবশিষ্ট থাকবে, সব মাসের জন্য মাসিক মিনিমাম বিল যা আসে, সব পরিশোধ করতে হবে। তাহলে কেউ চুক্তিবদ্ধ কেন হবেন? হবেন কারণ চুক্তির মেয়াদ বুঝে হ্যান্ডসেটের উপর ভালো অংকের ছাড় পাওয়া যায়। ৩ বছর মেয়াদী চুক্তিতে মধ্যম মানের সব হ্যান্ডসেট ফ্রী পাওয়া যায়। আমার সময় অফারে এই সেটগুলো ছিলো না, কিন্তু তার পরপরই ৩ বছর মেয়াদী চুক্তিতে রজার্স দিচ্ছে নকিয়া এন-৯৫ ফ্রী, টেলাস দিচ্ছে ব্ল্যাকবেরী ফ্রী। আমার যেহেতু অনেকদিন থাকতেই হবে, ফোনও লাগবেই, তাই ৩ বছরের চুক্তিতে ঢুকে পড়লাম একটা স্যামসাঙ হিউ ফ্রীতে পাবার বিনিময়ে। আরেকটি সুবিধা হলো এই কিছুদিন পরই আমার তিনবছর পূর্ণ হবে, তখন আমি একটি বারগেন চালাবো আমার হ্যান্ডসেটটি আপগ্রেড করে দেয়ার জন্য, রাজি না হলে অন্য কম্পানীর সার্ভিসে চলে যাবার হুমকি দেবো। এসব দরকষাকষি এখানে বেশ ভালোই চলে। স্টোর ম্যানেজারদের হাতে বেশ কিছু ছাড় দেয়ার ক্ষমতা থাকে, দরকষাকষি করলে সেই ছাড়গুলো আদায় করা যায়।
১২.
প্লানের আবার ধরণ বুঝে ভিন্ন ভিন্ন দাম (মাসিক)। শুধু ভয়েস প্লান আছে, ডাটা ও ভয়েস প্লান আছে, কর্পোরেট প্লান আছে, কত মিনিট ফ্রী তার হিসাব আছে, স্টুডেন্ট প্লান আছে, টেক্সট ইনটেনসিভ প্লান আছে (যারা কথা বলার চেয়েও শুধু এসএমএসই করে সারাদিন তাদের জন্য) - মোট কথা প্লানের রকমফেরের কোন শেষ নেই। অনেক দেখে শুনে মাসিক ১০ ডলারের ভয়েস প্লানটাই নিলাম। সন্ধ্যা ৬ টা থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত এবং শনি-রবিবার সকল লোকাল কল ফ্রী আনলিমিটেড, সোম থেকে শুক্রবার দিনের বেলায় ২৫০ মিনিট পর্যন্ত ফ্রী, ২৫০র বেশি হলে মিনিট হিসাবে অতিরিক্ত চার্জ। কিন্তু মাসিক বিল শুনতে দশ ডলার মনে হলেও আসলে তা নয়। ফোনটা নেয়ার পর আমাকে বলা হলো ১০ ডলারের সাথে যোগ হবে সরকারী ৬.৯৫ ডলার চার্জ, বাধ্যতা মূলক ৯১১ ফ্যাসিলিটি চার্জ যোগ হবে দেড় ডলার; এবং আমি কোন টেক্সট পাঠাতেও পারবোনা, রিসিভও করতে পারবোনা;
আমার ফোনে কলার আইডিও থাকবে না - কে ফোন করলো আমি তা দেখতে পাবো না; ভয়েস মেলও থাকবে না - আমি ফোন না তুললে কেউ আমাকে মেসেজ রাখতে পারবে না। বললাম, 'তা কী করে হয়? আমারতো টেক্সটও দরকার, কলার আইডি-তো অবশ্যই লাগবে, ভয়েস মেল না হয় না নিলাম'। তখন জানলাম আমাকে এগুলো আলাদা আলাদা করে কিনতে হবে এবং এর জন্য মাসিক অতিরিক্ত ১৮ ডলার। তবে আমি যদি ১২ ডলার দিয়ে একটা স্পার্ক১২ প্যাকেজ কিনি তাতে মাসে ২০০টা টেক্সট, ৩ মেমোরীর ভয়েস মেল, কলার আইডি এবং ১০০ টা ওয়েবসাইটে আনলিমিটিড ফ্রী ব্রাউজিং সুবিধা পাবো। কী আর করা - নিতে হলো স্পার্ক১২। সব কিছুর উপর আবার ১২% ট্যাক্স ধরে ১০ ডলারের ফোনে বিল গুনতে হয় ৩৫ ডলারের মতো।
১৩.
আসল মেজাজ খারাপ ঘটনাটার শুরু এখানেই। ১০০টা ওয়েবসাইটে আনলিমিটেড ব্রাউজিং - এর মধ্যে ইয়াহু, গুগল, ফেসবুক, টুইটার, অনেকগুলো নিউজ সাইট, ব্যাংক, আবহাওয়া সংক্রান্ত সাইট, মোটামোটি প্রয়োজনের সবই আছে। তাই শুরু করে দিলাম চলতে ফিরতে ব্রাউজিং। মাস শেষে বিল দেখেতো আমার আক্কেল গুড়ুম, আমাকে ১০০টা সাইটের বাইরে অন্য সাইটগুলোতে ব্রাউজ করার জন্য ১৬ ডলার বাড়তি চার্জ করা হয়েছে। রেগে মেগে কল দিলাম,
- এটা কি ফাজলামী পেয়েছ? আমি তোমাদের নির্ধারিত ১০০টার বাইরে কোন সাইটেই যাইনি, এই সব চার্জ কোথা থেকে এলো? জবাব এলো,
~ তুমি যেসব সাইটে গিয়েছ সেখানে যেসব বিজ্ঞাপনগুলো দেখা যায় তা আসে আমাদের ১০০ সাইটের বাইরের কোন সাইট থেকে, তাই সেসবের জন্য চার্জ হবে।
আমিতো বাঙ্গালী, এত সহজে ছেড়ে দেব? বললাম, ফেয়ার এনাফ! কিন্তু আমি সেসব বিজ্ঞাপন দেখা বন্ধ করতে চাই, আমাকে সে ব্যবস্থা দাও।
~ তাতো আমরা দিতে পারবো না, সেসব তো থার্ড পার্টির সাইট।
- তাহলে তোমরাই বন্ধ কর তোমাদের প্রক্সি দিয়ে।
~ সেটাও টেকনিক্যালী আমরা পারছি না।
- তাহলে আমাকে বিজ্ঞাপনের জন্য চার্জ করা বন্ধ কর।
উপায়ান্তর না দেখে শেষমেষ তাকে মানতেই হলো আমাকে বিজ্ঞাপনের জন্য চার্জ করা বন্ধ করতে হবে।
অনেক গ্রাহক আছে যারা ভালো করে আইটেমাইজড বিল দেখেও না, যেমন এখন আর আমি দেখি না। সেসব গ্রাহকদের কাছ থেকে এভাবেই অনেক টাকা এরা হাতিয়ে নিচ্ছে। কেউ কেউ দেখলেও আমার মতো এভাবে তর্কাতর্কি জুড়ে দেয় কিনা তাতেও সংশয় আছে।
তাই মাঝে মাঝে বলি বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহকরা এখনো স্বর্গে বাস করেন, তবে সেই দিন শীঘ্রই ফুরলো বলে। দেশের অপারেটররা দ্রুতই এসব খারাপ জিনিস দেশে আমদানী করে নিয়ে যাচ্ছেন।
০৪.
এরপর থাইল্যান্ডে চলে গেলাম দু'বছরের জন্য। ল্যান্ডফোন একটা থাকলেও ততদিনে মোবাইল কালচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় একটা মোবাইলও দরকার। আরেক বাংলাদেশী তার অব্যবহৃত 1-2-Call এর একটা প্রিপেড সিম দিয়ে দিলো আমাকে। কিন্তু খরচের অবস্থা যেই কে সেই। প্রতিমিনিট ৫ বাথ (তখনকার রেটে বালাদেশী টাকায় প্রায় ৮ টাকার মতো), দেশে একটা টেক্সট করলে ১০ বাথ (১৬ টাকা), অফপিকে দেশে কল করলে ৩৩ বাথ (৫৩ টাকা), অন্য সময় ৫০ বাথ (৮০ টাকা)। খরচ-যন্ত্রনার যেন শেষ নেই।
০৫.
দেশে ফিরে এসে পুরনো ফোনগুলোই চালাতে থাকলাম। তবে যাবার আগে যে অবারিত ইন্টারনেট সুবিধা গত ৬/৭ বছর ছিলো, ফিরে এসে তা আর পেলাম না। উল্টো থাইল্যান্ডে হাইস্পীডের ইন্টারনেটের বদৌলতে নেট আসক্তিও বেড়েছে; ফলে বাসায় একটা নেট কানেকশন দরকার হলো। ততদিনে টিএন্ডটির ফোন অনেক শস্তা ও সহজলভ্য হয়েছে, ডায়াল-আপ ইন্টারনেটও শস্তাই। একবার ভাবলাম নিয়ে ফেলি একটা ফোন। পরে আবার কী মনে করে একদিনের সিদ্ধান্তেই নিয়ে ফেললাম বেসরকারী পিএসটিএন বে-ফোনস্-এর একটা ফিক্সড ফোন। এটার সুবিধা ভয়েস কল ও ইন্টারনেট একসাথেই চালানো যায়, ছাদের উপর একটা অ্যান্টেনা বসাতে হলো শুধু। কলচার্জ টিএন্ডটির সমান, লোকাল কল ৫ মিনিটে পালস; আর ৮০০ টাকায় সারা মাস আনলিমিটেড ইন্টারনেট। যদিও নেটের স্পীড ভয়াবহ কম, তবুতো সার্বক্ষণিক একটা ব্যবস্থা হলো! সবচেয়ে বড় আরাম যা পাওয়া গেল তা হলো - যে কোন অসুবিধায় এদের কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে 'ঝাড়ি' দেয়া যেত আচ্ছা করে, ভালোমতো ঝাড়ি দিতে পারলে কয়েক ঘন্টার মধ্যে কেউ না কেউ বাসায় চলে আসতো ট্রাবলশুটিংয়ের জন্য।
০৬.
বে-ফোনসের কারণে আমার মোবাইল নির্ভরতাও অনেকটাই কমে গেল, কথা বলার খরচও কমেছে অনেকটাই। ততদিনে মোবাইল ফোনগুলোর চার্জও কিছু কিছু কমতে শুরু করেছে; এফএনএফ, পিক-অফপিক আওয়ার হরেক রকমের কায়দা বেরুলো। তবু একদিন আমার এক প্রাক্তন ছাত্র ও তখন সহকর্মী যখন বললো, "স্যার, আপনার জন্য টেলিটকের একটা লটারী এন্ট্রি দিয়ে রেখেছি", ভাবলাম মন্দ কি? একসময় লটারীতে নাম উঠলোও (লটারীগুলো আসলে হাতে বাছাই করা হতো বলেই আমার বিশ্বাস, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে লটারীতে নাম উঠেনি এমন কোন সহকর্মী পেলাম না)। অন্য ফোনের সিম যখন মাত্র ১/২শ টাকা, তখন যদ্দুর মনে পড়ে ৩,৯০০ টাকা দিয়ে কোন এক ব্যাংকে লাইন দিয়ে সিমটি নিয়েও এলাম যথাসময়ে, আশা এবার আরো কম রেটে কথা বলবো।
কিন্তু হায়! 'সস্তার তিন অবস্থা' কথাটার সত্যতা প্রমান করার জন্যই যেন টেলিটক কম্পানীটির জন্ম। ফোনটি ভালোমতো ব্যবহারই করতে পারলাম না। ভাগ্যক্রমে আমার বাসায় নেটওয়র্ক পেলেও, শহরের বহু এলাকাতেই ফোনটি কাজ করে না নেটওয়র্ক নেই বলে, আর শহরের বাইরে গেলেতো অবধারিতভাবেই কাভারেজের বাইরে। শেষমেষ প্রায় ফেলেই রাখলাম সিমটি।
০৭.
তীব্র পানি সংকটের জন্য বাসা বদল করতে হলো আমার কিছুদিন পর। কিন্তু নতুন বাসায় গিয়েই দেখি আমার বে-ফোনসের নেটওয়র্ক নেই - কাভারেজ এরিয়ার মধ্যেই, কিন্তু পথিমধ্যে দৈত্যাকৃতি ষোলতলা এক অ্যাপার্টমেন্টের জন্য ফোনটির অ্যান্টেনা লাইন-অব-সাইটের মধ্যে আনা যাচ্ছে না। আমাদের বিল্ডিংটি মাত্র ৪ তলা। বে-ফোনসের অ্যান্টেনা টাওয়ারের সাথে লাইন-অব-সাইটে না হলে ঠিক মতো সিগনাল পায় না। কাজেই জঞ্জাল হিসাবে ফেলে রাখলাম সব যন্ত্রপাতি। ইন্টারনেট নিয়ে পড়ে গেলাম বেকায়দায়।
০৮.
এর মধ্যে এক বন্ধু কোথা থেকে গ্রামীনের দুটো কর্পোরেট প্যাকেজের সিম নিয়ে এসে একটা দিলেন আমাকে। দু'চারদিন নেট ব্যবহার করে হতাশ হয়ে ফেলে রাখলাম সিমটি। এরই মধ্যে এক সহকর্মী এলেন আমার বিভাগে - আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব একেটেলে-র কর্পোরেট গ্রাহক হয়েছে, আমি কোন সংযোগ নেব কিনা জানতে। তখন বাসায় নেট নেই, খড়কুটো যা পাই তাই আঁকড়ে ধরি এই অবস্থা আমার - তাই নিয়ে ফেললাম দুটো সিম। একটা দিলাম আবার সেই বন্ধুকেই। আমারটায় ৮০০ টাকায় আনলিমিটেড ইন্টারনেট চালু করলাম। বে-ফোনস বা গ্রামীন থেকে অনেক দ্রুতগতির নেট পেলাম। সেই কানেকশনটাই এখনো আমার বাসায় চালু আছে। বাড়তি সুবিধা যা পেলাম তা হলো - কর্পোরেট গ্রাহক হিসাবে একটু বাড়তি মনোযোগ, আর সাপোর্ট দেয়ার জন্যও কম্পানী থেকে দায়িত্ব দেয়া হলো আমাদেরই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা তাঁদের এক কর্মীকে। ফলে কাস্টমার সার্ভিস পাওয়াও অনেক সহজ হয়ে গেল, ১২৩-এ কল না দিয়ে সরাসরি সেই কর্মীকেই ফোন দেই, আর তিনি তা ডীল করেন তাঁর টেকনিক্যাল বিভাগের লোকজনের সাথে।
০৯.
আরেকটি ফোনের কথা না বললেই নয়। আমার এক আত্মীয়কে তাঁর ব্যাংকের এক ক্লায়েন্ট প্রাইভেট পিএসটিএন 'যুবক ফোন'-এর ৩/৪ টি ফোন সেটসহ উপহার দিয়েছেন, তারই একটি একসময় আমার বাসায় পৌঁছে গেল। হাতে গোনা ২০ টি কল তা দিয়ে করতে পেরেছি কিনা সন্দেহ, সেটাও এখন বাসায় কোন জঞ্জালে খুঁজলে পাওয়া যাবে, কিছুদিন আমার ছেলেমেয়ের খেলনা হিসাবে ভালো কাজ দিয়েছে অবশ্য।
১০.
কানাডায় চলে আসার আগে আগে আমার এক থিসিস স্টুডেন্ট পাশ করে বেরিয়ে ওয়ারিদ টেলিকমের একটি প্রশাসনিক পদে নিয়োগ পেয়েছে। সে বললো, স্যার আপনাকে একটা ওয়ারিদ সিম দেই, নেট ব্যবহার করেও আরাম পাবেন। বললাম, ভাই, অনেক হয়েছে; দশ বছরে ছ'টা কম্পানীর দশটা ফোন ব্যবহার করে ফেলেছি। এই খবর পেলে পরে ফোন কম্পানীগুলো আমাকে আর ফোনই বেচবে না।
০১.
১৯৯৮ এর কোন এক সময় গ্রামীনের একটি টিএন্ডটি সংযোগসহ ন্যাশনওয়াইড পোস্টপেড মোবাইল কিনলাম। সে সময় সব মোবাইলের টিএন্ডটি সংযোগ ছিলো না। কিছু ফোন ছিলো শুধু মোবাইল-টু-মোবাইল, কিছু ছিলো টিএন্ডটি সংযোগসহ, কিছু ছিলো সম্ভবত শুধু জোনাল, কিছু ন্যাশনওয়াইড, আর অল্প কিছু আইএসডি। প্রিপেড তখনো চালু হয়েছে কিনা মনে পড়ছে না।
যা হোক, ফোনটি নিয়েই আসলে ফেঁসে গেলাম। কল করি আর না করি ৫৭৫ টাকা লাইন রেন্ট। প্রতিমিনিট ভ্যাটসহ ৪.৬০ টাকা, ইনকামিং ২.৩০ টাকা; টিএন্ডটিকে কল করলে সাথে টিএন্ডটির বিল যোগ হবে, চট্টগ্রামের বাইরে কল করলে সাথে টিএন্ডটির এনডব্লিওডি বিল। এই বিল দিতে দিতে ফতুর হওয়ার যোগাড়। নিজের কল যদিওবা নিয়ন্ত্রনে রাখি অন্যের কল রিসিভ করলেই ২.৩০ হারে বিল দিতে দিতে কোন কোন মাসে আমার বিল সাড়ে তিন হাজার টাকায় উঠতো। কি করে এই রাক্ষসের হাত থেকে রক্ষা পাই তা যখন ভাবছিলাম তখনই একদিন আমার ফোনটি আইএসডি-তে উন্নীত করে দিল গ্রামীন ফোন।
সে সময় আইএসডি ফোনের অস্বাভাবিক চাহিদা। টিএন্ডটিতে দরখাস্ত করে ২/৩ বছরও অনেকে বসে আছেন ডিমান্ড নোটের জন্য, ডিমান্ড নোট যারা সৌভাগ্যক্রমে পেয়ে গিয়েছেন তাদেরও টাকা জমা দিয়ে সংযোগের জন্য বসে থাকতে হচ্ছে দীর্ঘদিন, উপরি লেনদেনতো আছেই। তাই হঠাৎ করেই গ্রামীনের আইএসডিগুলোর খুব কদর হলো বাজারে - কোন কোন সিম একলাখ টাকায়ও হাতবদল হয়েছে শুনেছি। আমারটা যখন আইএসডি হলো ততদিনে এই দাম অনেকটাই পড়ে গিয়েছে, তবে মন্দও নয়। তাই এক কলিগের বেকার ছোটভাইয়ের ফোন-ফ্যাক্সের দোকানের জন্য যখন আমার ফোনটি চাইলেন, খুশি হয়েই রাজি হয়ে গেলাম। ১৪,৮০০ টাকায় কেনা ফোনটি ছেড়ে দিলাম ৪৫,০০০ টাকায়।
০২.
পোস্টপেড ফোনটি ছেড়ে দিয়েই কিনলাম দুটি প্রিপেড ফোন। প্রথমত সরাসরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম টিএন্ডটি নামের সোনার হরিণের সাথে সংযোগসুবিধা থেকে। তাতে ইনকামিং বিলের যন্ত্রনা থেকে রেহাই পেলেও আউটগোয়িং চার্জ হয়ে গেল দেড়গুণ, মিনিটে ভ্যাটসহ ৬.৯০ টাকা। তার উপর যন্ত্রনা রিচার্জের ২১ দিনের মেয়াদ, ব্যালেন্স টপ-আপ করার ২১ দিনের মধ্যেই কথা বলতে হবে, ২১ দিন পর ব্যালেন্স থাকলেও আবার রিচার্জ করতে হবে, নয়তো ফোন বন্ধ। দুই ফোনে প্রতি ২১ দিনে ৩০০ টাকা করে ৬০০ টাকা, তবুও আগের তুলনায় অনেক কম। ফোনের সংখ্যাও ততদিনে অনেক বেড়েছে, প্রথম যখন ফোন কিনি তখন গ্রামীন গ্রাহক ছিলেন মাত্র ৯ হাজার, প্রিপেডগুলো নেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই শুনতে পেলাম গ্রামীনের ১ লাখ গ্রাহক পূর্ণ হয়েছে। পরিচিতদেরও অনেকেরই হাতে প্রিপেড ফোন চলে আসায় টিএন্ডটি নির্ভরতা কিছুটা কমেছে।
০৩.
সেসময় মোবাইল অপারেটরগুলো একটা অভিযোগ সবসময় করতো যে টিএন্ডটির সংযোগ তারা সবসময়ই দিতে চায়, কিন্তু টিএন্ডটির গেটওয়ে এক্সেসে অসহযোগিতার কারণেই তারা তা পারছেনা। সেসময়ের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক যায়যায়দিনে সম্পাদক শফিক রেহমানের একটি লেখা এখন মনে পড়ছে আমার। তিনি টিএন্ডটিকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন, (সরাসরি উদ্ধৃতি দিতে পারিনি) আপনাদের গেটওয়ে এখনই মোবাইল অপারেটরদের কাছে উম্মুক্ত করে দিন। আপনাদের গ্রাহকসংখ্যা এখনো মোবাইল গ্রাহকের কয়েকগুণ, কিন্তু সেই দিন আর বেশি দূরে নয় যখন মোবাইল গ্রাহক আপনাদের গ্রাহককে শতগুণে ছাড়িয়ে যাবে। তখন আপনাদেরকেই হামাগুড়ি দিয়ে মোবাইলে কম্পানীগুলোর কাছে গিয়ে সংযোগ ভিক্ষা চাইতে হবে।
এত দ্রুত চোখের সামনেই তা ঘটবে চিন্তাই করিনি।
পূর্ববর্তী পর্বসমূহ:
শখের ছবিয়ালের টিপস-০১
শখের ছবিয়ালের টিপস-০২
গত পর্বে সংক্ষেপে বলেছিলাম ক্যামেরা কিভাবে এক্সপোজার নিয়ন্ত্রন করে এবং ফোকাস নিবদ্ধ করে। এবার এ নিয়ে একটু বিস্তারিত। যদি এ পর্বে এসে ভাবতে শুরু করেন এই তত্ত্বগুলোর কী প্রয়োজন, কেন আমি সরাসরি কিছু টিপস দিতে শুরু করছিনা, তার উত্তরে আমি বলবো 'এ জিনিসগুলো বোঝার দরকার আছে আমার সত্যিকারের টিপসগুলো বোঝার জন্য'। আমি যথাসম্ভব টেকনিক্যাল বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা সরল রাখতে চেষ্টা করছি ।
এক্সপোজার:
আগের পর্বে বলেছিলাম শুট বাটনটি অর্ধেক চেপে ধরলে দৃশ্যের আলোর পরিমান বুঝে ক্যামেরা সঠিক এক্সপোজার নির্ধারণ করে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আপনি যে দৃশ্যের ছবি তুলছেন তার সব অংশে আলোর পরিমান বা উজ্জ্বলতা সমান নয় - কোন অংশ রোদ, কোন অংশে ছায়া, আবার কোন অংশে উজ্জ্বল রং, কোন অংশে গাঢ় রং। এরকম আলোক ভিন্নতার একটি উদাহরণ হলো আকাশ ও দুরের বন/পাহাড় - আকাশের অংশ অনেক বেশি উজ্জ্বল, নিচে বন/পাহাড় অনেকটাই অন্ধকার। এরকম ভিন্ন ভিন্ন উজ্জ্বলতার অংশ যদি দৃশ্যে থাকে ক্যামেরা কোন অংশের জন্য সঠিক এক্সপোজার নির্ধারণ করবে? যদি উজ্জ্বল অংশের জন্য সঠিক এক্সপোজার নির্ধারণ করতে হয়, তাহলে গাঢ় অংশ অন্ধকার আসবে; আবার গাঢ় অংশের জন্য এক্সপোজার নির্ধারণ করলে উজ্জ্বল অংশ বেশি উজ্জ্বল হয়ে প্রায় জ্বলে যাবে। প্রায়ই আপনারা ছবিতে দেখেন যে আকাশ নীল না এসে সাদা হয়ে যায়, এটা আকাশের অতিরিক্ত এক্সপোজারের জন্যই হয়ে থাকে।
দৃশ্যের কোন অংশ কতটুকু উজ্জ্বল তা বোঝার জন্য ক্যামেরাকে বিভিন্ন অংশ থেকে আসা আলোর তীব্রতা মাপতে হয়। এই মাপার কাজটিকে বলে মিটারিং। প্রায় সব ডিজিটাল ক্যামেরার ক্ষেত্রেই যে পদ্ধতিতে ক্যামেরা মিটারিং করে থাকে তাকে বলে ম্যাট্রিক্স মিটারিং। এর অর্থ হলো দৃশ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে যে আলো আসে তা আলাদা আলাদাভাবে ক্যামেরা মেপে নেয়। এরপর ক্যামেরার সফটওয়্যার দৃশ্যের গড় উজ্জ্বলতা থেকে এক্সপোজারের সিদ্ধান্ত নেয়। গড় বলতে যে সবসময় গাণিতিক গড় হবে এমন কোন কথা নেই। এক এক ব্রান্ডের ক্যামেরার এক এক রকমের গড় হিসাব করার পদ্ধতি আছে, সবাই চায় তাদের ক্যামেরা যেন সবচেয়ে বুদ্ধিমত্বার সাথে গড়টি হিসাব করতে পারে, ফলে সবচেয়ে ভালো ছবি আসে। এবং প্রস্তুতকারকরা এই অ্যালগরিদমগুলো সাধারণত প্রকাশ করে না, তাই নিশ্চিতভাবে কোন ক্যামেরা কিভাবে গড় বের করে তা আমরা জানি না। সুখের কথা অ্যালগরিদমটি আমাদের না জানলেও চলবে, শুধু জানতে হবে মিটারিংয়ে কোন প্রকার ভেরিয়েশন ক্যামেরা আমাদের পছন্দ করতে দেয় কিনা। সব সস্তা ক্যামেরা দেয় না, তবে কোন কোন ক্যামেরা কয়েকরকম মিটারিং মোড সেট করতে দেয় - ইভ্যালুয়েটিভ বা ইন্টেলিজেন্ট মিটারিং, সেন্টার ওয়েটেড অ্যাভারেজ মিটারিং, স্পট মিটারিং ইত্যাদি।
* ইভ্যালুয়েটিভ বা ইন্টেলিজেন্ট মিটারিং: এই মিটারিংয়ে দৃশ্যের সব অংশের আলোর তীব্রতাকে বিবেচনায় এনে ক্যামেরা একটি এক্সপোজার নির্ধারণ করে;
* সেন্টার ওয়েটেড অ্যাভারেজ মিটারিং: এই মিটারিংয়ে দৃশ্যের মাঝামাঝি অংশের উপর বেশি জোর দেয়া হয়, অর্থাৎ ক্যামেরা চায় মাঝের অংশের এক্সপোজার যথাসম্ভব সঠিক থাকুক, ছবির চারপাশের অংশগুলোর এক্সপোজার ততটা সঠিক না হলেও চলবে;
* স্পট মিটারিং: স্পট মিটারিংয়ে দৃশ্যের একেবারে কেন্দ্রে যা থাকবে তার উপর ভিত্তি করে এক্সপোজার নির্ধারিত হবে, তাতে ছবির বাকি সব অংশের এক্সপোজার যাই হবে হোক (ওভার বা আন্ডার)।
বাদবাকি ক্যামেরা ব্যবহারকারীর সিদ্ধান্ত তিনি পুরো দৃশ্য সমান গুরুত্ব দিয়ে এক্সপোজ করতে চান নাকি শুধু মাঝখানের কিছু অংশকে প্রাধান্য দিতে চান, নাকি শুধু কেন্দ্রকেই বিবেচনায় আনতে চান। এই সিদ্ধান্ত নির্ভর করে আপনি কিসের ছবি তুলছেন, বাস্তবিক কতটা তারতম্য আছে বিভিন্ন অংশের উজ্জ্বলতার - এসব বিষয়ের উপর। এই তত্ত্বটির ব্যবহারিক প্রয়োগ করা খুব সহজ নয়, তবে জানা থাকলে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিজেই শিখে ফেলা যায় কোন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে।
ফোকাস:
এ ব্যাপারে আগের পর্বে বলেছিলাম ক্যামেরা অটোফোকাসের সাহায্যে নিজেই দৃশ্যের জিনিসগুলোর উপর ফোকাস নিবদ্ধ করে। যদি সব বস্তু সমান দুরত্বে হয়, ব্যাপারটি খুব সহজ, সেই দুরত্বে ফোকাস করলেই হয়। কিন্তু কোন জিনিস কাছে, কোন জিনিস দূরে হলে ক্যামেরা চেষ্টা করে দুটোকেই ফোকাসে আনতে। কাছে দূরে
সমানভাবে ফোকাস করা কি সম্ভব? উত্তর হ্যা এবং না। 'না' এই জন্য যে, সাধারণ নিয়ম হলো, কাছে ফোকাস করলে দূরের জিনিস ঝাপসা হয়ে যাবে, দূরে ফোকাস করলে কাছের জিনিস ঝাপসা হয়ে যাবে। আবার উত্তর 'হ্যা' এই জন্য যে, তা নির্ভর করে
কয়েকটি বিষয়ের উপর -
১। মূল ফোকাসকৃত বস্তুটি ক্যামেরা থেকে কত দূরে (ফোকাল ডিসট্যান্স)
২। 'কাছে' এবং 'দূরে'-র বস্তুর মধ্যে দূরত্ব কতটা (ডেপথ)
৩। লেন্সের অ্যাপার্চার কত।
যতটা দূরত্বের মধ্যে সব বস্তুই ফোকাসে থাকে তাকে ডেপথ-অব-ফিল্ড বলে। এই ডেপথ-অব-ফিল্ড স্থির নয়, কমে বাড়ে। যদি দুটি বস্তুর দূরত্ব ক্যামেরার ডেপথ-অব-ফিল্ড -এর চেয়ে কম হয় তাহলে উভয় বস্তুই ফোকাসে আনা সম্ভব। এই বিষয়ক আরেকটু আলোচনা করতে পারলে ভালো হতো, তবে নিরস হয়ে যাবে মনে করে আপাতত বাদ দিয়ে গেলাম, পরে কখনো প্রয়োজন মনে করলে লিখতেও পারি।
আপনার দৃশ্যে ক্যামেরা যখন দেখবে বস্তুগুলো কাছে-দূরে আছে, তখন ক্যামেরা নিচের দুটির যে কোন একটি কাজ করবে -
১। ডেপথ-অব-ফিল্ড বাড়িয়ে সবগুলোকে
ফোকাসে আনার চেষ্টা করবে। সেটা করা সম্ভব লেন্সের পর্দার ছিদ্রটি (অ্যাপার্চার) ছোট করে (বড় f সংখ্যা)। অ্যাপার্চার কমালে আলো কমে যাবে, তাই আলো ঠিক রাখার জন্য একই সাথে ক্যামেরা এক্সপোজার টাইম বাড়িয়ে দেবে (শাটার স্পীড কম)। ISO যদি Auto-তে থাকে ISO speed বাড়িয়েও কমে যাওয়া এক্সপোজারকে ঠিক করতে পারে ক্যামেরা।
২। প্রথম প্রক্রিয়াটি যদি সফল না হয় (প্রধানত লেন্সের সীমাবদ্ধতার কারণে), তখন
ক্যামেরা যে কোন একটি বস্তুকে ফোকাসে এনে অন্যটিকে ফোকাসের বাইরে রাখবে। এই সিদ্ধান্তটি আপনার পক্ষে নেয়া যত সহজ, ক্যামেরার পক্ষে সহজ নয়; কারণ আপনি জানেন দৃশ্যের কোন জিনিসটি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, ক্যামেরার জানার কথা নয়। তবু আজকালকার ক্যামেরাগুলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করে কোন জিনিসটি কী - কোনটি মানুষ, কোনটি ফুল, কোনটি আপাতদৃষ্টিতে অনুল্লেখ্য বা সাবজেক্ট হিসাবে কম গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক ক্যামেরা আছে বাটনটি অর্ধেক চাপলে দৃশ্যের কোথায় কোথায় ফোকাস করার চেষ্টা করছে তা আপনাকে দেখাবে। যদি আপনার সেসব মনপুত না হয়, একটু ভিন্ন দুরত্ব বা ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে আবার ফোকাস করার চেষ্টা করুন। অনেক ক্যামেরায় ফেস ডিটেকশন প্রযুক্তি আছে, দৃশ্যে যেখানেই মানুষের চেহারা দেখা যাবে সেখানেই ক্যামেরা ফোকাস করার চেষ্টা করবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্যামেরার পছন্দ আপনার পছন্দের সাথে মিলে যাবে, তবে এমনও পরিস্থিতি হয় যখন আপনি যে জিনিসটি ফোকাস করতে চাইছেন, ক্যামেরা কিছুতেই সেই জিনিসটি ফোকাস করছে না। তখন ক্যামেরাকে 'বোকা বানিয়ে' ফেলতে হয়, অর্থাৎ ক্যামেরার এই স্মার্ট বা ইন্টেলিজেন্ট অপশানটি বন্ধ করে দিতে হয় (সব ক্যামেরায় বন্ধ করা নাও যেতে পারে)। ইন্টেলিজেন্ট অটোফোকাস বন্ধ করে দিলে ক্যামেরা শুধুমাত্র দৃশ্যের কেন্দ্রে যা আছে তাকেই ফোকাস করে (সেন্টার ফোকাসিং)। এবার আপনি যে জিনিসটি ফোকাস করতে চান তাকে ভিউ-র ঠিক কেন্দ্রে এনে বাটনটি অর্ধেক চাপুন, এভাবে আপনার কাঙ্খিত জিনিসটির উপর ফোকাস নিবদ্ধ হবে।
লক:
এখন সমস্যা হলো আপনার কাঙ্খিত বস্তুটি সবসময় ছবির কেন্দ্রে থাকুক এটা আপনি চাইবেন না, এমনকি ভালো কম্পোজিশনের জন্য মূল সাবজেক্টকে অফ-সেন্টার রাখার কথা বলা হয় (রুল অব থার্ড)। আবার লক্ষবস্তুকে অফ-সেন্টারে রাখলে অন্য কিছু চলে আসবে কেন্দ্রে, ও ফোকাসে। এই সমস্যা থেকে পরিত্রানের জন্য আমার জানামতো সব ক্যামেরাতেই একটি বিশেষ ব্যবস্থা আছে, তার নাম ফোকাস ও এক্সপোজার লক। আপনি যখন বাটনটি অর্ধেক চাপেন তখন শুধু যে ফোকাস ও এক্সপোজার নির্ধারিত হয় তাই নয়, বাটনটি ছেড়ে না দেয়া পর্যন্ত যে ফোকাস ও এক্সপোজার নির্ধারিত হয়েছে তা অপরিবর্তিত (লক্ড) থাকে। কাজেই লক্ষ্যবস্তুকে কেন্দ্রে রেখে বাটনটি অর্ধেক চেপে ফোকাস করুন, এবং বাটনটিকে অর্ধেক চেপে রেখেই ক্যামেরার মুখ সামান্য ঘুরিয়ে বস্তুটিকে অফ-সেন্টারে (ছবির ফ্রেমে আপনার কাঙ্খিত অবস্থানে) নিয়ে আসুন, এবার বাটনটি পুরো চেপে দিয়ে ছবিটি তুলে ফেলুন। এই পুরো প্রক্রিয়ায় একবারও বাটনটি ছেড়ে দেবেন না, দিলেই ফোকাস ও এক্সপোজার নড়ে যাবে।
Copyright 2010 সাইদুর রহমান চৌধুরী
Theme designed by Lorelei Web Design
Blogger Templates by Blogger Template Place | supported by One-4-All