-------------------------------------------------------
এই পর্বগুলো লিখতে গিয়ে দুটি ব্যাপার ঘটেছে; এক. টিপস দিতে গিয়ে মনে হলো অল্প কিছু তাত্ত্বিক আলোচনা ছাড়া টিপসগুলো খুব ভালোভাবে বোঝাতে পারছিনা, তাই তত্ত্বগুলো চলে আসতে থাকলো; দুই. তাত্ত্বিক বিষয় লিখতে গিয়ে মনে হলো শুরুতে যে শিরোনাম দিয়ে লেখাটি শুরু করেছিলাম, সেই শিরোনাম এখন আর যথার্থ রইলোনা। ভাবছি লিখার নাম 'ডিজিটাল ফটোগ্রাফী' করে দেব কিনা। আপনাদের মতামত পেলে খুশি হব।
-------------------------------------------------------

ডিজিটাল ছবি কী-২?

গত পর্বে 'ডিজিটাল ছবি কী' তার একটি খন্ডিত জবাব দিয়েছিলাম এভাবে -

১। ডিজিটাল ছবি বা ইমেজ হলো অনেকগুলো পিক্সেলের সমষ্ঠি।
২। পিক্সেলগুলো সারি ও কলাম হিসাবে সাজানো থাকে।
৩। প্রতিটি পিক্সেলের নিজস্ব 'রঙ' (রঙ্গীন ছবির ক্ষেত্রে) এবং উজ্জ্বলতা (রঙ্গীন ও সাদাকালো উভয় ছবির ক্ষেত্রে) আছে।

তবে ডিজিটাল ছবির এটাই প্রধান পরিচয় নয়। যে কোন সাধারণ ব্যবহারকারীর কাছে ডিজিটাল ছবি হলো একটি কম্পিউটার ফাইল, সচরাচর যার এক্সটেনশান হয়ে থাকে JPG (বা JPEG = Joint Photograhic Expert Group)। কোন কোন ক্যামেরা ছবিকে TIF (বা TIFF = Tagged Image File Format), raw (বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ক্যামেরায় বিভিন্ন এক্সটেনশান), DNG (Digital NeGative) এসব ফর্ম্যাটেও রেকর্ড করতে সক্ষম।

ডিজিটাল ছবি (আরো ব্যাপকার্থে বলতে গেলে ডিজিটাল ইমেজ) হলো একটি সংখ্যা-ম্যাট্রিক্স (সারি ও কলাম আকারে সাজানো কিছু সংখ্যামাত্র)। এই ম্যাট্রিক্সটিকে (সংখ্যাগুলোকে) সেভ করার জন্য একটা ফাইল দরকার, এবং তা উপরের যে কোন একটি ফাইল ফর্ম্যাটে রাখা যায়। নিচের ছবিটি দেখুন, কতগুলো সংখ্যা সাজানো আছে।

গত পর্বে বলেছিলাম পিক্সেল কী ও কিভাবে তা সারি ও কলাম আকারে মোজাইকবদ্ধ হয়ে ছবির রূপ দেয়। এই সংখ্যাগুলি হলো প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি পিক্সেলের উজ্জ্বলতা (Brightness/Luminiscence)। বেশিরভাগ সস্তা ক্যামেরা ২৫৬ টি ধাপে উজ্জ্বলতা রেকর্ড করতে পারে, ০ (শুন্য) হলো সবচেয়ে কম উজ্জ্বলতা (নিকষ কালো) এবং ২৫৫ হলো সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বলতা (পুরোপুরি সাদা)। মাঝামাঝি যে কোন সংখ্যা হলো সাদা ও কালোর মাঝামাঝি একটি ধুসর রং, গাঢ় থেকে হালকা। নিচের ছবিটি দেখুন -



এই ছবিতে দেখানো হয়েছে সংখ্যার মান ০ থেকে বেড়ে ২৫৫ হতে হতে কিভাবে উজ্জ্বলতাও বেড়ে কালো থেকে সাদাতে রূপ নেয়। এটাকেই বলা হয় গ্রে-স্কেল, হয়তো অনেকে নাম শুনে থাকবেন। তাই সাদা-কালো ছবিকে গ্রে-স্কেল ছবিও বলা হয়।

এতক্ষণ যা বললাম, আসলে ঠিক উল্টোভাবে বললাম, কারণ সংখ্যার কারণে উজ্জ্বলতা নির্ধারিত হয় - এ কথাটি যতটা সত্য, তারচেয়ে বেশি সত্য হলো যেটুকু উজ্জ্বলতা ক্যামেরা পরিমাপ করে সেই অনুযায়ী সংখ্যা নির্ধারণ করে। এই সংখ্যা নির্ধারণের প্রক্রিয়ার নাম ডিজিটাইজেশান। ক্যামেরার লেন্স দিয়ে যখন আলো প্রবেশ করে তখনো ছবিটি অ্যানালগ থাকে, যেই মাত্র ক্যামেরা ডিজিটাইজেশান সম্পন্ন করে, তখনই ছবিটি ডিজিটাল হয়ে যায়। প্রতিটি পিক্সেলের জন্য ডিজিটাইজেশান সম্পন্ন করার পর ক্যামেরার সফটওয়্যার এই সংখ্যা ম্যাট্রিক্সটিকে একটি ফাইলে সেভ করে, সেটাকেই আমরা ডিজিটাল ছবি হিসাবে পেয়ে থাকি।

এবার নিচের ছবিটি দেখুন। বামদিকে আছে যে দৃশ্যটির ছবি তোলা হচ্ছে তা, দৃশ্যে উজ্জ্বলতার তারতম্য লক্ষ্য করুন। এই উজ্জ্বলতার তারতম্য অনুযায়ী ক্যামেরার সফটওয়্যার একটি ডিজিটাল সংখ্যা-ম্যাট্রিক্স তৈরী করেছে, যা মাঝখানে দেখিয়েছি। এই সংখ্যা-ম্যাটিক্সটিই যখন আমরা ক্যামেরার ডিসপ্লে বা কম্পিউটারে দেখি তা দেখায় ডানদিকের ছবিটির মতো (৯ পিক্সেলের ছবি)।



বলা বাহুল্য উপরের ছবিটি কোন সত্যিকারের ক্যামেরায় তোলা ছবি নয়। কিন্তু এবার একটি সত্যিকারের ছবির সংখ্যা-ম্যাট্রিক্সটি দেখুন নিচে (সংখ্যাগুলো পড়ার মতো বড় করে দেখার জন্য ছবির উপর ক্লিক করুন)। এটি একটি ৫০x৫০ ম্যাট্রিক্স অর্থাৎ ২৫০০ পিক্সেলের ছবি।



এই সংখ্যা-ম্যাটিক্সটি ছবি নিচের দেখুন-



১০ গুণ বড় করে দেখুন -





এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কেন ডিজিটাল ছবিকে ডিজিটাল বলা হয়, কিভাবে ক্যামেরা ডিজিটাল ছবি তৈরী করে, আর কিভাবে আমরা তা দেখতে পাই। কিন্তু এ পর্যন্ত যা আলোচনা করলাম তাতে একটি সাদাকালো (গ্রে-স্কেল) ছবির ব্যাখ্যা পাওয়া গেলো, কিন্তু রঙিন ছবি কিভাবে আসে? আশা করি পরের পর্বে রঙিন ছবি নিয়ে আলোচনা করবো।

পূর্ববর্তী পর্বসমূহ:
শখের ছবিয়ালের টিপস-০১
শখের ছবিয়ালের টিপস-০২
শখের ছবিয়ালের টিপস-০৩
শখের ছবিয়ালের টিপস-০৪

0 comments:

Post a Comment