ফোন কড়চা-০১

Written by Sayedur R Chowdhury 0 comments Posted in:

০১.

১৯৯৮ এর কোন এক সময় গ্রামীনের একটি টিএন্ডটি সংযোগসহ ন্যাশনওয়াইড পোস্টপেড মোবাইল কিনলাম। সে সময় সব মোবাইলের টিএন্ডটি সংযোগ ছিলো না। কিছু ফোন ছিলো শুধু মোবাইল-টু-মোবাইল, কিছু ছিলো টিএন্ডটি সংযোগসহ, কিছু ছিলো সম্ভবত শুধু জোনাল, কিছু ন্যাশনওয়াইড, আর অল্প কিছু আইএসডি। প্রিপেড তখনো চালু হয়েছে কিনা মনে পড়ছে না।

যা হোক, ফোনটি নিয়েই আসলে ফেঁসে গেলাম। কল করি আর না করি ৫৭৫ টাকা লাইন রেন্ট। প্রতিমিনিট ভ্যাটসহ ৪.৬০ টাকা, ইনকামিং ২.৩০ টাকা; টিএন্ডটিকে কল করলে সাথে টিএন্ডটির বিল যোগ হবে, চট্টগ্রামের বাইরে কল করলে সাথে টিএন্ডটির এনডব্লিওডি বিল। এই বিল দিতে দিতে ফতুর হওয়ার যোগাড়। নিজের কল যদিওবা নিয়ন্ত্রনে রাখি অন্যের কল রিসিভ করলেই ২.৩০ হারে বিল দিতে দিতে কোন কোন মাসে আমার বিল সাড়ে তিন হাজার টাকায় উঠতো। কি করে এই রাক্ষসের হাত থেকে রক্ষা পাই তা যখন ভাবছিলাম তখনই একদিন আমার ফোনটি আইএসডি-তে উন্নীত করে দিল গ্রামীন ফোন।

সে সময় আইএসডি ফোনের অস্বাভাবিক চাহিদা। টিএন্ডটিতে দরখাস্ত করে ২/৩ বছরও অনেকে বসে আছেন ডিমান্ড নোটের জন্য, ডিমান্ড নোট যারা সৌভাগ্যক্রমে পেয়ে গিয়েছেন তাদেরও টাকা জমা দিয়ে সংযোগের জন্য বসে থাকতে হচ্ছে দীর্ঘদিন, উপরি লেনদেনতো আছেই। তাই হঠাৎ করেই গ্রামীনের আইএসডিগুলোর খুব কদর হলো বাজারে - কোন কোন সিম একলাখ টাকায়ও হাতবদল হয়েছে শুনেছি। আমারটা যখন আইএসডি হলো ততদিনে এই দাম অনেকটাই পড়ে গিয়েছে, তবে মন্দও নয়। তাই এক কলিগের বেকার ছোটভাইয়ের ফোন-ফ্যাক্সের দোকানের জন্য যখন আমার ফোনটি চাইলেন, খুশি হয়েই রাজি হয়ে গেলাম। ১৪,৮০০ টাকায় কেনা ফোনটি ছেড়ে দিলাম ৪৫,০০০ টাকায়।

০২.

পোস্টপেড ফোনটি ছেড়ে দিয়েই কিনলাম দুটি প্রিপেড ফোন। প্রথমত সরাসরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম টিএন্ডটি নামের সোনার হরিণের সাথে সংযোগসুবিধা থেকে। তাতে ইনকামিং বিলের যন্ত্রনা থেকে রেহাই পেলেও আউটগোয়িং চার্জ হয়ে গেল দেড়গুণ, মিনিটে ভ্যাটসহ ৬.৯০ টাকা। তার উপর যন্ত্রনা রিচার্জের ২১ দিনের মেয়াদ, ব্যালেন্স টপ-আপ করার ২১ দিনের মধ্যেই কথা বলতে হবে, ২১ দিন পর ব্যালেন্স থাকলেও আবার রিচার্জ করতে হবে, নয়তো ফোন বন্ধ। দুই ফোনে প্রতি ২১ দিনে ৩০০ টাকা করে ৬০০ টাকা, তবুও আগের তুলনায় অনেক কম। ফোনের সংখ্যাও ততদিনে অনেক বেড়েছে, প্রথম যখন ফোন কিনি তখন গ্রামীন গ্রাহক ছিলেন মাত্র ৯ হাজার, প্রিপেডগুলো নেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই শুনতে পেলাম গ্রামীনের ১ লাখ গ্রাহক পূর্ণ হয়েছে। পরিচিতদেরও অনেকেরই হাতে প্রিপেড ফোন চলে আসায় টিএন্ডটি নির্ভরতা কিছুটা কমেছে।

০৩.

সেসময় মোবাইল অপারেটরগুলো একটা অভিযোগ সবসময় করতো যে টিএন্ডটির সংযোগ তারা সবসময়ই দিতে চায়, কিন্তু টিএন্ডটির গেটওয়ে এক্সেসে অসহযোগিতার কারণেই তারা তা পারছেনা। সেসময়ের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক যায়যায়দিনে সম্পাদক শফিক রেহমানের একটি লেখা এখন মনে পড়ছে আমার। তিনি টিএন্ডটিকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন, (সরাসরি উদ্ধৃতি দিতে পারিনি) আপনাদের গেটওয়ে এখনই মোবাইল অপারেটরদের কাছে উম্মুক্ত করে দিন। আপনাদের গ্রাহকসংখ্যা এখনো মোবাইল গ্রাহকের কয়েকগুণ, কিন্তু সেই দিন আর বেশি দূরে নয় যখন মোবাইল গ্রাহক আপনাদের গ্রাহককে শতগুণে ছাড়িয়ে যাবে। তখন আপনাদেরকেই হামাগুড়ি দিয়ে মোবাইলে কম্পানীগুলোর কাছে গিয়ে সংযোগ ভিক্ষা চাইতে হবে।

এত দ্রুত চোখের সামনেই তা ঘটবে চিন্তাই করিনি।

0 comments:

Post a Comment