শিরোনাম দেখে চমকা‍বেন না। আসলে ৫৫% স্বাক্ষর বাঙালী 'ভালোবাসা' শব্দটির বানান ভুল করে লিখেন 'ভালবাসা'। সে হিসেবে বললাম তাঁরা 'ভালোবাসেন' না, 'ভালবাসেন'। আমি কী করে জানলাম সংখ্যাটি ৫৫ শতাংশ? প্রকৃতপক্ষে জানি না আমিও, একে একটি এস্টিমেট বা প্রাক্কলন বলা যেতে পারে। গুগল সার্চ ইঞ্জিনে অনুসন্ধান করে জানা গেল ইন্টারনেটে যত বাংলা লেখালেখি গুগলের ইন্ডেক্সে আছে তাতে 'ভালোবাসা' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার বার, আর 'ভালবাসা' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৪ লাখ ৭১ হাজার বার। গুগলের এই সংখ্যাটি শতভাগ নির্ভরযোগ্য যদিও নয়, কী-ওয়ার্ডের ব্যবহার তুলনা করার জন্য যথেষ্ঠ গ্রহণযোগ্য হবে সন্দেহ নেই। অন্তত অন্য কোন পরিসংখ্যান যখন নেই, তখন মন্দের ভালো এই গুগল ইন্ডেক্সই।

আরেকটি কারণে এই ইন্ডেক্সটি raw ডাটা হিসাবে বেশি গ্রহণযোগ্য হবার কারণ আছে। ছাপার অক্ষরে যা কিছু বেরোয় তার বেশিরভাগই কোন না কোন প্রকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে, শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। কিন্তু ইন্টারনেটের অল্প কিছু লেখা ছাড়া বেশিরভাগই অসম্পাদিত, লেখকের নিজস্ব বানান ধারণ করে। তাই একে স্বাক্ষর মানুষের নির্ভেজাল ও হস্তক্ষেপবিহীন প্রতিফলন বলে ধরে নেয়া যায়। তাই যখন শিক্ষিত বাঙালীর ৫৫% কে ভালোবাসা বানান ভুল করতে দেখা যায় তখন জাতিটির ভাষা শিক্ষার ব্যপারে উদ্বিগ্ন হতেই হয়। এই বানান ভুল যেখানে যেখানে করা হয় প্রথম আলো ব্লগ তার বাইরে নয়, যাঁরা বানান ভুল করেন আমি নিজেও তার বাইরে নই। চেষ্টা করি শুদ্ধ থাকার; হাত গলে, নজর গলে কিছু বানান ভুল হয়েই যায়। চেষ্টা ও চর্চার মধ্য দিয়ে নির্ভুল হতে থাকবো এটাই আশা।

ভালোবাসা ছাড়াও আরো কিছু শব্দের গুগল ইন্ডেক্স থেকে পাওয়া রেজাল্টের সংখ্যা যাচাই করে দেখলাম - বাংলাভাষীদের বানানের অবস্থা খুব উৎসাহব্যাঞ্জক নয়। আমার দেখার মধ্যে যে শব্দটি সবচেয়ে বেশি ভুল বানানে লেখা হয় তা হলো 'পঙ্‌ক্তি', মাত্র ২১% ক্ষেত্রে বানানটি সঠিক পাওয়া গেছে। ৭৯% ক্ষেত্রে তা পঙক্তি, পংক্তি, পংতি, বা পঙতি লেখা হয়।

অপরাপর শব্দের ক্ষেত্রে সঠিক বানানের সংখ্যাধিক্য পাওয়া গেলেও বেশ কয়েকটি শব্দের ক্ষেত্রে ভুল বানানের সংখ্যাকে অবহেলা করা যাচ্ছে না।

ন/ণ ঘটিত ভুল

কারণ শব্দটিতে ভুল করে 'ন' ব্যবহার হয়েছে ১৮ ভাগ ক্ষেত্রে। দরুন-এ ভুল করে 'ণ' ব্যবহার হয়েছে ২৬ ভাগের বেশি। দারুণ-এ ভুল ৪৬ ভাগ (আমি নিজে সহ)। তরুণ লিখতে ভুল হয়েছে প্রায় ২০ ভাগ।

ি/ী ঘটিত ভুল

প্রয়োজনীয় লিখতে ভুল করে ি ব্যবহার হয়েছে খুব কম (১.২%), কিন্তু সহযোগিতা লিখতে ভুল করে ী ব্যবহার হয়েছে প্রায় ১১ ভাগ। তবে জাতীয় লিখতে ভুল করেছেন নগণ্য, ০.৫ ভাগ।

ত/ৎ ঘটিত ভুল

অদ্ভুত লিখতে ভুল করে ৎ ব্যবহার হয়েছে নগণ্য (০.৫%), কিন্তু হঠাৎ লিখতে ত ব্যবহার হয়েছে প্রায় ১২ ভাগ, কিছুটা হয়তো কী-বোর্ডে ৎ খুজে না পাওয়া দায়ী হতে পারে।

ঙ/ং ঘটিত ভুল

আতঙ্ক, শঙ্কা, চিত্রাঙ্কন লিখতে ভুল করে আতংক, শংকা, চিত্রাংকন লিখা হয়েছে ২০ ভাগের মতো, তবে কঙ্কাল লিখতে ভুলটি অনেক বেশি - প্রায় ৩৫ ভাগ। প্রায় ৯৯ ভাগ 'বাংলা' লিখেছেন ং দিয়ে।

ব্য/ব্যা ঘটিত ভুল

ব্যক্তি, ব্যবহার, ব্যয় লিখতে ভুল করে া ব্যবহার করা হয়েছে যথাক্রমে ১১, ৭ ও ৪ ভাগ; কিন্তু ব্যবসা লিখতে ভুলটি হয়েছে অনেক বেশি - প্রায় ৩৬ ভাগ। ব্যাপার লিখতে া বাদ পড়েছে ১৫ ভাগেরও বেশি।

ব-ফলা ঘটিত ভুল

উচ্ছ্বল লিখতে ভুল করে ব-ফলা দেয়া হয়নি নগণ্য ক্ষেত্রেই (০.৫ ভাগ), কিন্তু উজ্জ্বল লিখতে ভুলটি করা হয়েছে প্রায় ২০ ভাগ।

দ্দ/দ্য ঘটিত ভুল

উদ্দেশ্য লিখতে গিয়ে উদ্যেশ্য লিখা হয়েছে নগণ্য (০.৫ ভাগ), উদ্যোগ লিখতে উদ্দোগ লিখা হয়ছে কিছুটা বেশি প্রায় আড়াই ভাগ।

স্ক/ষ্ক ঘটিত ভুল

আবিষ্কার লিখতে স্ক ব্যবহার হয়েছে ১৪ ভাগের সামান্য বেশি, পুরস্কার লিখতে ষ্ক ব্যবহার হয়েছে প্রায় ১৭ ভাগ।

অন্য কিছু

* অনুভূতি লিখতে অনুভুতি লিখা হয়েছে ১৯ ভাগ, অনূভুতি বা অনূভূতি লিখা হয়েছে নগণ্যই।
* ভুল লিখতে ভূল লিখা হয়েছে প্রায় ৭ ভাগ।
* সম্পূর্ণ শুদ্ধ করে লেখা হয়েছে প্রায় ৭৯ ভাগ, বাদবাকী লিখা হয়েছে সম্পূর্ন, সম্পুর্ণ বা সম্পুর্ন হিসাবে।
* আবৃত্তি-কে ভুল করে আবৃতি প্রায় ৫ ভাগ।
* কর্তৃপক্ষ-কে কতৃপক্ষ প্রায় ৮ ভাগ।
* মুহূর্ত কে ভুল করে মুহুর্ত ১৯ ভাগ, মূহুর্ত ৮ ভাগ, এবং মূহূর্ত আরো ১ ভাগ - সঠিক পাওয়া গেছে ৭২ ভাগ।

বিদেশি শব্দের বানান
বিদেশি শব্দের বানানের ক্ষেত্রে চট করে কোনটা ভুল তা বলে দেয়া যায় না, তবে কিছু শব্দের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমীর প্রমিত বানানে স্পষ্ট করে বলে দেয়া আছে, যেমন: জানুয়ারি, ফ্রেব্রুয়ারি। এ ক্ষেত্রে আমি প্রমিত নিয়মটিকে যথার্থ মনে করি না, বরং জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারী সঠিক মনে করি। গুগলে সংখ্যাগুলো পাওয়া গেছে এরকম-

* জানুয়ারী (৬০.৩) জানুয়ারি (৩৯.৭)
* ফেব্রুয়ারী (৫২.৬) ফেব্রুয়ারী (৪৮.৪)
* মেরী (৫৩.৩) মেরি (৪৬.৭)
* কী-বোর্ড/কীবোর্ড/কী বোর্ড (৫২.২) কি-বোর্ড/কিবোর্ড/কি বোর্ড (৪৭.৮)
* বীম (১৬.৫) বিম (৮৩.৫)
* অ্যাড (৪৪) এড (৫৬)
* জার্মানী (২৭.৪) জার্মানি (৭২.৬)

উপসংহার

বেশ কিছু শব্দের বানানে আমাদের ভুলের পরিমান প্রতি ৫ বারে একবার, কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতি ৩ বারে একবার বা তারও বেশি। এটা নিঃসন্দেহে খুব ভালো লক্ষণ নয়। তাই বানানের ব্যাপারে সবার বিশেষত ব্লগারদের আরো যত্নশীল হওয়ার আহ্বান জানাই।

Read more

Read more

Read more


Super Size Me (2004)
অস্কারের জন্য মনোনীত, ৫টি অন্যান্য পুরস্কার পাওয়া, আরো ৫টি পুরস্কারের জন্য মনোনীত।
ফাস্টফুড কতটা ক্ষতিকর তা প্রমান করতে গিয়ে কিভাবে মাত্র ৩০দিন ম্যাকডোনাল্ডের খাবার খেয়ে সুস্থ সবল একজন মানুষ প্রায় মারা যেতে বসেছিলেন দেখুন।
ট্রেলার দেখুন | টরেন্ট থেকে নামান | পুরোটা দেখুন


The Future of Food (2004)
ট্রেলার দেখুন | টরেন্ট থেকে নামান

কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ দেখুন। ভাববেন না এ ছবিগুলো আমেরিকার জন্য প্রযোজ্য, এ কর্পোরেশনগুলো ইতিমধ্যেই ভারতে প্রবেশ করেছে, বাংলাদেশে প্রবেশ সময়ের ব্যপার মাত্র। এখনই নোভার্টিস (Novartis) নামের কম্পানীটির উপর নজর রাখা প্রয়োজন সরকারের।


King Corn (2007)
ট্রেলার দেখুন | টরেন্ট থেকে নামান


Food, Inc. (2008)
অস্কারের জন্য মনোনীত, ৩টি অন্যান্য পুরস্কার পাওয়া, আরো ৬টি পুরস্কারের জন্য মনোনীত।
ট্রেলার দেখুন | টরেন্ট থেকে নামান


Food Matters (2009)
ট্রেলার দেখুন | টরেন্ট থেকে নামান

Read more

গতকাল বিশ্ব পরিবেশ দিসব উপলক্ষে ৩টি ইকো-ডকুমেন্টারী ফিল্মের লিংক দিয়েছিলাম শোকের আড়ালেও আজ পরিবেশ দিবস পোস্টে। আজ আর তিনটি। নিচের ছবিগুলোর সবকটিই মূলত উন্নত বিশ্বের নাগরিকদের বিশেষত উত্তর আমেরিকার প্রেক্ষাপটে সেখানকার মানুষের মধ্যে গণসচেতনতা তৈরীর উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছে, এবং বাংলাদেশের মত অনুন্নত দেশের জনগণের এ ব্যাপারে খুব বেশি কিছু করার নেই মনে হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে বাংলাদেশে এখন যে ধরণের অসুস্থ নগরায়ণ প্রক্রিয়া চলছে, এ ফিল্মগুলোর তথ্যগুলো যাচাই করলে আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু ভয়াবহ ইঙ্গিত পাওয়া যাবে। অল্প কথায় আমাদের নগরগুলো বিশেষত ঢাকা অচল হয়ে যেতে বাধ্য। সে নিয়ে একদিন লিখবো। আজ যাঁরা হাইরাইজ ভবনে ফ্লাট কিনছেন সে ফ্লাটে তাদের নিজেদের সন্তানরাই হয়তো আর বসবাস করতে পারবেন না - সেগুলো কিছু অকার্যকর টাওয়ারে পরিনত হবে। কল্পনা করুন ২০ বছর পর যদি ২০ তলা ভবনের লিফট না চলে? যদি রান্নাঘরে চুলা না জ্বলে বিষয়টি কেমন হবে? আপনাদের চিন্তার জন্য কিছু আই-ওপেনার ছবি-


The 11th Hour
টাইটানিকখ্যাত লিওনার্দো দ্য ক্যাপ্রিও-র ধারাবর্ণনায় একটি সাক্ষাতকারমূলক ডকুমেন্টারী
ট্রেলার দেখুন | টরেন্ট থেকে নামান


The End of Suburbia
এ ছবিটি দেখতে দেখতে ভাবুন বাংলাদেশে তেল-গ্যাসের যোগান বন্ধ হয়ে গেলে কী কী ঘটবে, আর তা যে ঘটবে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ না করলেও চলে।
ট্রেলার দেখুন | টরেন্ট থেকে নামান


Life after People
এটি মূলত একটি ফ্যান্টাসী, তবে দেখার মতই
ট্রেলার দেখুন | টরেন্ট থেকে নামান

Read more


আজ ৫ই জুন - বিশ্ব পরিবেশ দিবস। জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা UNEP এর স্পনসরশীপে ১৯৭৩ সন থেকে সারা বিশ্বে দিনটি পালিত হয়। প্রতিবছর দিবসটির জন্য একটি করে স্লোগান নির্ধারিত হয়। এবছরের স্লোগান - Many Species. One Planet. One Future. জ্ঞানদান আমার উদ্দেশ্য নয়, যারা আরো জানতে চান আজকের পত্রিকায় চোখ রাখলেই অনেক কিছু জানা হয়ে যাবে, অথবা ইন্টারনেটতো আছেই, বিশেষ করে http://www.unep.org/wed/2010/english/ এই সাইটে গিয়ে বিস্তারিত জানতে পারেন এবছরের কর্মকান্ড নিয়ে।

আমি এই পোস্টটি দিচ্ছি আপনাদের সাথে ভালো কিছু ইকোডকুমেন্টারী শেয়ার করার উদ্দেশ্যে। ইকোডকুমেন্টারী হলো সেই শ্রেণীর ডকুমেন্টারী ফিল্ম যেগুলো বিশ্বের পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়াবলী নিয়ে নির্মিত। ২০০৬ সালে নোবেল শান্তিপুরস্কার বিজয়ী সাবে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোরের ফিল্ম An Inconvenient Truth এর সাথে হয়তো অনেকেরই পরিচিতি আছে। তাঁর ছবিটির বিরোধিতা করার জন্য তেল কম্পানীদের অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে The Great Global Warming Swindle, আবার এবারের কোপেনহেগেন পরিবেশ সম্মেলনকে সামনে রেখে জনমত তৈরীর জন্য নির্মিত হয়েছে অসাধারণ একটি ছবি The Age of Stupid।


An Inconvenient Truth (2006)
ছবিটি ২টি অস্কারসহ বহু পুরস্কার ও অনেক নমিনেশন লাভ করেছিলো।
ইউটিউবে ট্রেলার দেখুন | টরেন্ট থেকে নামান


The Great Global Warming Swindle (2007)
এই ছবিটি ব্যপক বিরোধিতার মুখে পড়ে, এবং ছবিটিতে মিথ্যাচারের ও প্রচার পলিসি ভঙ্গ করার অভিযোগ ব্রিটেনের একটি ট্রাইবুনালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ইউটিউবে ট্রেলার দেখুন | টরেন্ট থেকে নামান


The Age of Stupid (2009)
ছবিটি ইউকে-তে একটি পুরস্কার লাভ করে, আরো পুরস্কার সামনে পাবার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা আছে।
ইউটিউবে ট্রেলার দেখুন | টরেন্ট থেকে নামান

Read more

পথচলতি-০৪

Written by Sayedur R Chowdhury 0 comments Posted in:

আরো একঘন্টা বেশি দেশে থাকতে পারার যে আশাটা মনে জেগেছিলো খুব মন খারাপ করে দিয়েই তা উবে গেলো। আমার যাত্রাসারনীতে যে সময় দেয়া আছে তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছিলাম - কারণ টিকেট যখন কিনেছি তখন ঘড়ি কার্যকর ছিলো স্টান্ডার্ড বিএসটি-তে, আর এখন কার্যকর ডে লাইট সেভিং - একঘন্টার হেরফের। আশা করেছিলাম যা সময় দেয়া আছে তার সাথে একঘন্টা যোগ করতে হতে পারে, কিন্তু আমার ক্যারিয়ার এয়ারলাইন্সের স্থানীয় অফিস থেকে জানা গেল সারনীর সময় অনুযায়ীই বিমান ছাড়বে। যাত্রার সময়টিও একেবারেই বাজে - ভোর ছ'টার কিছু পরে, মানে ভোর চারটা
নাগাদ বিমানবন্দরে পৌঁছে যাওয়া উচিত। একটাই সুবিধা পেলাম - রমজানের কারণে সেহরীতে এমনিতেই সবাই উঠবে, শুধু আমার জন্য কারো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে হবে না।

বোনের গাড়িতে লিফটের আশা ছিলো - ঠিক আগেরদিনই চালক মহাশয়কে কোন গুরুতর কারণে তাৎক্ষণিক বিদায় করে দেয়া হয়েছে, আচমকা বেকায়দায় পড়ে গেলাম। ভোররাতে কোন বন্ধুকে গাড়ির জন্য বিব্রত করতে ইচ্ছা হলো না, তাই বেলা থাকতেই একটা ভাড়ায় খাটা ভ্যান ঠিক করে এলাম। ভ্যানের একটা সুবিধা পাওয়া গেল, যারা যারা আমাকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দর যেতে চায় সবারই জায়গা হয়ে গেল।

ড্যাকফোবিয়ার কারণেই বন্ধুর সহকর্মীদের একজনের সাথে আগেই যোগাযোগ করা আছে আমার যাবার সময় বিমানবন্দরে সাহায্য পাবার উদ্দেশ্যে। ডিপার্চার টার্মিনালে পৌঁছে তাকে ফোন দিতেই বলে দিল কোন গেট দিয়ে ঢুকতে হবে। তিনি নিজেই বেরিয়ে এসে আমার ব্যাগ ট্রলি ভরে ভেতরে নিয়ে গেলেন। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি ঢুকলাম একটু পরে। ভোররাত হলেও বিমানবন্দরে ব্যস্ততার কিছুমাত্র হেরফের নেই, অনেক বছর আগে এমন ছিলো না। আগে বিমানবন্দরের ব্যাংকবুথও বন্ধ হয়ে যেতো বিকাল পাঁচটায়, পরদিন সকাল হবার আগ পর্যন্ত যারা বিমানবন্দর ব্যবহার করতেন তাঁদেরকে কারেন্সি লেনদেন করতে হতো দালালের সাথে। সে হিসেবে অনেকটাই উন্নতি হয়েছে গত দশ বছরে। টার্মিনালও বাড়িয়ে অনেক বড় করা হয়েছে, আগের প্রায় দ্বিগুণ। চাকচিক্যও বেড়েছে, আগের চেয়ে পরিচ্ছন্নতাও - টয়লেটে কমোড ওভারফ্লো হয়ে নোংরা পানিতে ফ্লোর ভেসে যেতে দেখিনি গত কয়েকদফা। অন্তত লন্ডনের হিথ্রো তিন নম্বর টার্মিনাল থেকে অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন - এটা ভেবে খুবই ভালো লাগলো।

বোর্ডিং নিতে এসে দেখি বেশ বড় লাইন, লন্ডন, নিউইয়র্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যের যাত্রীই বেশি। হাতে যথেষ্ঠ সময় আছে, তাই উদ্বেগহীন দাড়িয়ে গেলাম লাইনের পেছনে। সচরাচর বিমানবন্দরে আমি নারী কর্মী ও অফিসারদের এড়িয়ে চলি - তাঁরা একটু বেশি খুঁতখুঁতে হন, জেরা করতে পছন্দ করেন, এবং নিয়মের বাইরে না যাবার ব্যাপারে সবসময়ই কঠোর, খুঁটিনাটি অসঙ্গতিও নারী অফিসারদের নজর এড়িয়ে যায় না। প্রধানত পুরুষনিয়ন্ত্রিত পৃথিবীতে একজন পুরুষ যাত্রীর ওপর নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করার একটা প্রচ্ছন্ন ব্যাপারও থাকতে পারে, মনোবৈজ্ঞানীক গবেষণা ছাড়া নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে যাই থাকুক পেছনে, নারী অফিসাররা বিমানবন্দরগুলোয় পুরুষদের চেয়ে বেশি এফিশিয়েন্ট এটা আমি সবসময়ই মানি। আমার লাইনের শেষপ্রান্তে দেখতে পেলাম একজন নারী অফিসার বোর্ডিং দিচ্ছেন - ব্যাগের ওজন নিয়ে কোন সংশয় নেই, সাথে সাহায্যকারী আছে, তাই নারী-পুরুষ নিয়ে মাথা আর ঘামালাম না।

আমার পালা যখন এলো, ঠিক তখুনি কিছু একটা সমস্যা হয়েছে কম্পিউটারে - অনেক সময় লাগলো আমার ব্যাগগুলো চালান হয়ে যেতে। বিরক্ত হয়ে টিকেট ফেরত দেয়ার সময় অফিসার ঘোষনা করলেন - এই শেষ! সেহরীর সময় চলে যাচ্ছে, বাকী যাত্রীদের সেহরীর খাবার খেয়ে এসে বোর্ডিং দেবেন। যাক বাবা, বাঁচা গেল; আমার পরেরজনের চেহারাটা দেখার মতই হয়েছিলো, আরেকটু হলে আমারই ওরকম হতো। ভদ্রমহিলা চলে যেতেই খেয়াল করলাম আমার টিকেট-পাসপোর্ট দেয়া হয়েছে ঠিকই, তবে বোর্ডিং পাসই না দিয়ে চলে গিয়েছেন তিনি। ঘোরাঘুরি করে বিশ মিনিট পরে যখন আবার এলাম, মহিলা বললেন - সরি, সেহেরীর তাড়াহুড়ায় ভুলে পাসগুলো ড্রয়ারে রেখে দিয়েছিলাম। আমার সাহায্যকারীর দিকে ঘুরে বললেন, সালামকে দিয়ে ভিতরে পাঠিয়ে দিয়েছি, ইমিগ্রেশনে তাকে পাবা।

ইমিগ্রেশনের পর হাতের পানির বোতলটা শেষ করে রওয়ানা হলাম বোর্ডিং গেটের সিকিউরিটি চেকিংয়ে। সঙ্গীর ফোনটি চেয়ে নিয়ে তখনো বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষমান আমার পুত্র-কণ্যাকে বাসায় ফিরে যেতে বললাম - এরকম মুহুর্তে কথা হয় অনেক কষ্ট নিয়ে। তারচেয়েও বেশি কষ্ট নিয়ে ঢুকে পড়লাম ব্রীজের গোড়ায় ওয়েটিং লাউঞ্জে। পাঁচ কেজির ব্যাকপ্যাকটিকে তখন আধমন ওজনি মনে হতে থাকে।

(অসমাপ্ত)

Read more