ফোন কড়চা-০৩

Written by Sayedur R Chowdhury 0 comments Posted in:

১১.

এখানে এসেই যাদের সাথে উঠলাম তাদের দুজনেরই সেলফোন, এবং অ্যাপার্টমেন্টে ফিক্সড ফোন রাখা হয়নি। তাই তাৎক্ষণিক আমারো সেলফোনই দরকার হয়ে পড়লো। পরদিনই গেলাম বড় একটা ইলেকট্রনিক্স আউটলেটে। জিএসএম, সিডিএমএ - দুরকমের সার্ভিস প্রোভাইডারই আছে। প্রিপেড (পে-অ্যাজ-ইউ-গো) এবং পোস্টপেড (প্লান) দুরকমের আছে। পে-অ্যাজ-ইউ-গো ফোনগুলো দেশের মতোই রিচার্জ করে করে ব্যবহার - তবে স্বভাবতই খরচ বেশি। আর প্লান গুলো অবস্থা বুঝে সাশ্রয়ী। প্লান হতে পারে কোন প্রতিশ্রুতি ছাড়া, অর্থাৎ আমি যখন ইচ্ছা তখনই এই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে বলতে পারি। আবার হতে পারে ১, ২ বা ৩ বছর মেয়াদে চুক্তিবদ্ধ; অর্থাৎ মেয়াদপূর্তির আগে আমি ফোন ছাড়তে পারবো না। ছাড়লে মেয়াদপূর্তির যত মাস অবশিষ্ট থাকবে, সব মাসের জন্য মাসিক মিনিমাম বিল যা আসে, সব পরিশোধ করতে হবে। তাহলে কেউ চুক্তিবদ্ধ কেন হবেন? হবেন কারণ চুক্তির মেয়াদ বুঝে হ্যান্ডসেটের উপর ভালো অংকের ছাড় পাওয়া যায়। ৩ বছর মেয়াদী চুক্তিতে মধ্যম মানের সব হ্যান্ডসেট ফ্রী পাওয়া যায়। আমার সময় অফারে এই সেটগুলো ছিলো না, কিন্তু তার পরপরই ৩ বছর মেয়াদী চুক্তিতে রজার্স দিচ্ছে নকিয়া এন-৯৫ ফ্রী, টেলাস দিচ্ছে ব্ল্যাকবেরী ফ্রী। আমার যেহেতু অনেকদিন থাকতেই হবে, ফোনও লাগবেই, তাই ৩ বছরের চুক্তিতে ঢুকে পড়লাম একটা স্যামসাঙ হিউ ফ্রীতে পাবার বিনিময়ে। আরেকটি সুবিধা হলো এই কিছুদিন পরই আমার তিনবছর পূর্ণ হবে, তখন আমি একটি বারগেন চালাবো আমার হ্যান্ডসেটটি আপগ্রেড করে দেয়ার জন্য, রাজি না হলে অন্য কম্পানীর সার্ভিসে চলে যাবার হুমকি দেবো। এসব দরকষাকষি এখানে বেশ ভালোই চলে। স্টোর ম্যানেজারদের হাতে বেশ কিছু ছাড় দেয়ার ক্ষমতা থাকে, দরকষাকষি করলে সেই ছাড়গুলো আদায় করা যায়।

১২.

প্লানের আবার ধরণ বুঝে ভিন্ন ভিন্ন দাম (মাসিক)। শুধু ভয়েস প্লান আছে, ডাটা ও ভয়েস প্লান আছে, কর্পোরেট প্লান আছে, কত মিনিট ফ্রী তার হিসাব আছে, স্টুডেন্ট প্লান আছে, টেক্সট ইনটেনসিভ প্লান আছে (যারা কথা বলার চেয়েও শুধু এসএমএসই করে সারাদিন তাদের জন্য) - মোট কথা প্লানের রকমফেরের কোন শেষ নেই। অনেক দেখে শুনে মাসিক ১০ ডলারের ভয়েস প্লানটাই নিলাম। সন্ধ্যা ৬ টা থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত এবং শনি-রবিবার সকল লোকাল কল ফ্রী আনলিমিটেড, সোম থেকে শুক্রবার দিনের বেলায় ২৫০ মিনিট পর্যন্ত ফ্রী, ২৫০র বেশি হলে মিনিট হিসাবে অতিরিক্ত চার্জ। কিন্তু মাসিক বিল শুনতে দশ ডলার মনে হলেও আসলে তা নয়। ফোনটা নেয়ার পর আমাকে বলা হলো ১০ ডলারের সাথে যোগ হবে সরকারী ৬.৯৫ ডলার চার্জ, বাধ্যতা মূলক ৯১১ ফ্যাসিলিটি চার্জ যোগ হবে দেড় ডলার; এবং আমি কোন টেক্সট পাঠাতেও পারবোনা, রিসিভও করতে পারবোনা;
আমার ফোনে কলার আইডিও থাকবে না - কে ফোন করলো আমি তা দেখতে পাবো না; ভয়েস মেলও থাকবে না - আমি ফোন না তুললে কেউ আমাকে মেসেজ রাখতে পারবে না। বললাম, 'তা কী করে হয়? আমারতো টেক্সটও দরকার, কলার আইডি-তো অবশ্যই লাগবে, ভয়েস মেল না হয় না নিলাম'। তখন জানলাম আমাকে এগুলো আলাদা আলাদা করে কিনতে হবে এবং এর জন্য মাসিক অতিরিক্ত ১৮ ডলার। তবে আমি যদি ১২ ডলার দিয়ে একটা স্পার্ক১২ প্যাকেজ কিনি তাতে মাসে ২০০টা টেক্সট, ৩ মেমোরীর ভয়েস মেল, কলার আইডি এবং ১০০ টা ওয়েবসাইটে আনলিমিটিড ফ্রী ব্রাউজিং সুবিধা পাবো। কী আর করা - নিতে হলো স্পার্ক১২। সব কিছুর উপর আবার ১২% ট্যাক্স ধরে ১০ ডলারের ফোনে বিল গুনতে হয় ৩৫ ডলারের মতো।

১৩.

আসল মেজাজ খারাপ ঘটনাটার শুরু এখানেই। ১০০টা ওয়েবসাইটে আনলিমিটেড ব্রাউজিং - এর মধ্যে ইয়াহু, গুগল, ফেসবুক, টুইটার, অনেকগুলো নিউজ সাইট, ব্যাংক, আবহাওয়া সংক্রান্ত সাইট, মোটামোটি প্রয়োজনের সবই আছে। তাই শুরু করে দিলাম চলতে ফিরতে ব্রাউজিং। মাস শেষে বিল দেখেতো আমার আক্কেল গুড়ুম, আমাকে ১০০টা সাইটের বাইরে অন্য সাইটগুলোতে ব্রাউজ করার জন্য ১৬ ডলার বাড়তি চার্জ করা হয়েছে। রেগে মেগে কল দিলাম,
- এটা কি ফাজলামী পেয়েছ? আমি তোমাদের নির্ধারিত ১০০টার বাইরে কোন সাইটেই যাইনি, এই সব চার্জ কোথা থেকে এলো? জবাব এলো,
~ তুমি যেসব সাইটে গিয়েছ সেখানে যেসব বিজ্ঞাপনগুলো দেখা যায় তা আসে আমাদের ১০০ সাইটের বাইরের কোন সাইট থেকে, তাই সেসবের জন্য চার্জ হবে।

আমিতো বাঙ্গালী, এত সহজে ছেড়ে দেব? বললাম, ফেয়ার এনাফ! কিন্তু আমি সেসব বিজ্ঞাপন দেখা বন্ধ করতে চাই, আমাকে সে ব্যবস্থা দাও।
~ তাতো আমরা দিতে পারবো না, সেসব তো থার্ড পার্টির সাইট।
‍- তাহলে তোমরাই বন্ধ কর তোমাদের প্রক্সি দিয়ে।
‍~ সেটাও টেকনিক্যালী আমরা পারছি না।
- তাহলে আমাকে বিজ্ঞাপনের জন্য চার্জ করা বন্ধ কর।
উপায়ান্তর না দেখে শেষমেষ তাকে মানতেই হলো আমাকে বিজ্ঞাপনের জন্য চার্জ করা বন্ধ করতে হবে।

অনেক গ্রাহক আছে যারা ভালো করে আইটেমাইজড বিল দেখেও না, যেমন এখন আর আমি দেখি না। সেসব গ্রাহকদের কাছ থেকে এভাবেই অনেক টাকা এরা হাতিয়ে নিচ্ছে। কেউ কেউ দেখলেও আমার মতো এভাবে তর্কাতর্কি জুড়ে দেয় কিনা তাতেও সংশয় আছে।

তাই মাঝে মাঝে বলি বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহকরা এখনো স্বর্গে বাস করেন, তবে সেই দিন শীঘ্রই ফুরলো বলে। দেশের অপারেটররা দ্রুতই এসব খারাপ জিনিস দেশে আমদানী করে নিয়ে যাচ্ছেন।

0 comments:

Post a Comment