[প্রথম পর্বে আপনাদের আগ্রহ ছিলো আশাতীত। সেখানে করা আপনাদের মন্তব্য, বিশেষ করে পরামর্শ ও চাহিদামূলক মন্তব্যগুলো গুরুত্ব দিয়েই নিয়েছি, এবং পরের পর্বগুলোতে আপনাদের পরামর্শ ও চাহিদার যথাসম্ভব প্রতিফলন দেখতে পাবেন আশা করি। আন্তরিক ধন্যবাদ সবাইকে।]
[আগের পর্বের মন্তব্যগুলোর জবাব এখনো দেয়া হয়নি আরো কয়েকটি পর্বের পরিকল্পনা করতে গিয়ে, সময় করে দিয়ে দেব, আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]

প্রথম পর্ব: শখের ছবিয়ালের টিপস-০১

আপনার ক্যামেরাকে জানুন:

আপনার ক্যামেরাটিকে জানার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো তার ম্যানুয়াল (ইউজার গাইড) ভালো করে স্টাডী করা। যদি কারো ম্যানুয়াল না থাকে, বা হারিয়ে গিয়ে থাকে, ইন্টারনেট থেকে pdf ভার্সন নামিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে পারেন গুগলে সার্চ দিয়ে। কিছু ব্রান্ডের ক্যামেরার ম্যানুয়াল কোথায় কোথায় পাবেন তার একটি লিংক তালিকাও নিচে দিলাম-

ক্যানন
নাইকন
সনি
অলিম্পাস
কোডাক
ক্যাসিও
কনিকা মিনোল্টা
এপসন

এর পর যা জানা দরকার, এমনকি ম্যানুয়াল/ইউজার্স গাইড পড়ে বোঝার জন্যও যা জানা দরকার-

কিভাবে ডিজিটাল ক্যামেরা কাজ করে:

এখানে আমি ডিজিটাল ক্যামেরার ফিজিক্স বা মেকানিক্স (কিভাবে কাজ করে তা) আলোচনা করতে চাইনা, বরং আপনি যখন ক্যামেরাটি ব্যবহার করেন তখন ক্যামেরার অপারেশন্স (কী কাজ করে তা) বলতে চাই সংক্ষেপে। কী কাজ করে তা বোঝার জন্য আপনার দুটি ব্যাপার জানা দরকার - এক্সপোজার ও ফোকাস।

১। এক্সপোজার

আপনারা জানেন দৃশ্যের বস্তুগুলোর উপর আলো পড়লে আমরা তা দেখতে পাই বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে আসে বলে। একই কারণেই ক্যামেরার লেন্সও তা দেখতে পায়। লেন্সের ভেতর দিয়ে যে আলো প্রবেশ করে তা ক্যামেরার সেন্সরে (এবং ফিল্মে) ছবি হিসাবে রূপ পায়। আলো বেশি হলে দৃশ্যটি উজ্জ্বল হবে, আলো কম হলে অন্ধকার হবে। কিন্তু আমরা বেশি উজ্জ্বল (জ্বলে যাওয়া) ছবিও চাইনা, অন্ধকারমতো ছবিও চাইনা - আমরা চাই মাঝামাঝি (সঠিক উজ্জ্বলতার) ছবি। এ কাজটি করে থাকে ক্যামেরার এক্সপোজার কন্ট্রোল সিস্টেম। বাইরে আলো বেশি হলে ক্যামেরা তা কমিয়ে নেয়, আলো কম থাকলে তা বাড়িয়ে নেয়। ক্যামেরা দু'ভাবে এই কাজটি করে থাকে-

১.ক) শাটার স্পীড

কতক্ষণ সময় ক্যামেরার লেন্সের ভেতর দিয়ে আলো ঢুকবে তা নির্ধারণ করে শাটার স্পীড। বুঝতেই পারছেন ১ সেকেন্ডে যে পরিমান আলো ঢুকবে, ২ সেকেন্ডে তার দ্বিগুন পরিমান আলো ঢুকবে। স্বাভাবিক সময় ক্যামেরার লেন্স সবসময় বন্ধই থাকে একটি পর্দা বা ডায়াফ্রাম দিয়ে, যখন আপনি ছবি তোলার বাটনটি চাপেন তখনই অল্প সময়ের জন্য পর্দাটি খুলে গিয়ে আবার বন্ধ হয়ে যায়। আমরা সেই খোলা-বন্ধ হবার মৃদু ক্লিক শব্দও শুনতে পাই। (ডিজিটাল ক্যামেরা টেকনোলজিতে এই পর্দাটি থাকবেই এমন নাও হতে পারে, বিশেষ করে মোবাইল ফোন ক্যামেরায়, পর্দার কাজটি ডিজিটালীও নিয়ন্ত্রন করা যেতে পারে)। সাধারণত আলো ঢোকানোর এই কাজটি খুব অল্প সময় হয়ে থাকে, ঝকঝকা রোদে কোন কিছুর ছবি তুললে সময়টি ১ সেকেন্ডের ৫০০ বা ১০০০ ভাগের একভাগ মাত্র; কিন্তু একই জিনিসের ছবি গাঢ় ছায়াতে তুললে ১ সেকেন্ডর ৬০ বা ১২৫ ভাগের একভাগ সময়, অর্থাৎ প্রায় তিনগুন বেশি সময় আলো ঢোকাবে ক্যামেরার এক্সপোজার কন্ট্রোল সিস্টেম। এভাবে দৃশ্যের আলো কম থাকলে সময় বাড়িয়ে এবং দৃশ্যের আলো বেশি থাকলে সময় কমিয়ে ক্যামেরা সঠিক পরিমান আলো প্রবেশের ব্যবস্থা করে থাকে।

টীকা ১: উপরে যে এক সেকেন্ডের ৬০, ১২৫, ৫০০, ১০০০ ভাগের এক ভাগ সময় উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করেছি এটাকে ফটোগ্রাফী তে ১/৬০, ১/১২৫.... অথবা শুধু ৬০, ১২৫ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। শাটার স্পীড ৩০ বললে বুঝবো ১/৩০ সেকেন্ড।

টীকা ২: অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শাটার স্পীড ৬০-র নীচে চলে গেলে ক্যামেরা হাতে রেখে ছবি তোলা নিরাপদ নয়, ছবি ঝাপসা (ব্লারড) হবে, সেক্ষেত্রে ট্রাইপড বা অন্য নিশ্চল জিনিসের উপর ক্যামেরা রেখে ছবি তোলা উচিত। তবে যার ছবি তুলছেন সে জিনিসটি যদি নড়তে থাকে, তাহলে কিছুই করার নেই।

১.খ) অ্যাপার্চার

শাটার স্পীড ছাড়াও আর যে পদ্ধতিতে আলোর পরিমান নিয়ন্ত্রন করা হয় তার নাম অ্যাপার্চার। উপরে যে পর্দাটির কথা বলেছি তা এমনভাবে তৈরী যে তার ছিদ্রমুখটি (অ্যাপার্চার) চোখের তারার মতই বড় ছোট করা যায়। তীব্র আলোয় যেমন আমাদের চোখের মনি ছোট হয়ে যায়, কম আলোয় বড় হয়ে যায়; ঠিক একই ভাবে আলোর তারতম্য বুঝে ক্যামেরার অ্যাপার্চার ছোট বড় হয়। এভাবেও ক্যামেরা সঠিক পরিমান আলোর প্রবেশ নিয়ন্ত্রন করে থাকে।

টীকা: অ্যাপার্চার নির্দেশ করা হয় একটি অনুপাত দিয়ে, যেমন: ১:২.৮ বা f/2.8 হিসাবে, তবে বলার সময় শুধু সংখাটিই সাধারণত উল্লেখ করা হয় (২.৮)। ডিজিটাল ক্যামেরায় অ্যাপার্চার নির্দেশক সংখ্যাটি যে কোন কিছু হতে পারে, তবে সাধারণত অ্যাপার্চার ১.৪, ২, ২.৮, ৪, ৫.৬, ৮, ১১, ১৬, ২২ এরকম হয়ে থাকে। সংখ্যাটি যত ছোট পর্দার ছিদ্রটি তত বড় ও তত বেশি আলো প্রবেশ করবে, সংখ্যাটি যত বড় ছিদ্র তত ছোট ও কম আলো প্রবেশ করবে।

১.গ) প্রকৃতপক্ষে সকল ক্যামেরাই শাটার স্পীড ও অ্যাপার্চার এর যে কোন একটি নয়, বরং দুটোর সমন্বয় করেই আলোর পরিমান নিয়ন্ত্রন করে থাকে।

২। ফোকাস

যে জিনিসের ছবি তুলছেন তা যদি সঠিকভাবে ফোকাস হয়ে থাকে তবেই শার্প ছবি পাবেন, নয়তো ছবি ঝাপসা (আউট-অব-ফোকাস) দেখাবে। আজকাল সকল ডিজিটাল ক্যামেরাই অটোফোকাস, অর্থাৎ নিজে নিজেই দৃশ্যের বস্তুগুলোর দুরত্ব হিসাব করে সেগুলোকে ফোকাসে নিয়ে আসতে পারে। সঠিক ফোকাসে আনার জন্য লেন্সের ভিতর ইলিমেন্টগুলোকে অবস্থান বদল করতে হয়। সাধারণত কাছের জিনিসকে ফোকাসে আনলে দূরের জিনিস ঝাপসা হবে, দূরের জিনিসকে ফোকাসে আনলে কাছের জিনিস ঝাপসা হয়ে যাবে।


এ পর্যন্ত জানার পর আবার শুরুর কথায় ফিরে যাই, আপনি যখন ছবি তোলেন ক্যামেরা তখন কী করে? এক. আলোর পরিমান অনুযায়ী শাটার স্পীড ও অ্যাপার্চার পরিবর্তন করে সঠিক এক্সপোজার নির্ধারণ করে, দুই. লেন্সের সামনে যা কিছু আছে সেগুলোর উপর ফোকাস নিবদ্ধ করে। ফোকাস নিবদ্ধ করার কাজটি সহজ হয় যদি সব বস্তু সমান দূরে থাকে। কিন্তু সব বস্তু যদি সমান দূরে না থেকে কাছে দূরে থাকে, তাহলে ক্যামেরা কোনটাকে ফোকাসে আনবে? এটা নির্ভর করবে আপনি ক্যামেরাকে কোন মোডে রেখেছেন তার উপর (এ নিয়ে আরেকটি পর্ব লিখতে হবে, তাই আজকে বাদ দিয়ে যাচ্ছি)।

এই দুটো কাজ করার জন্য একটু হলেও ক্যামেরার সময় দরকার, বিশেষ করে ফোকাস করার জন্য (যেহেতু ক্যামেরা লেন্সের ভিতর কিছু ম্যাকানিক্যাল কাজ করার দরকার হয়)। এই সময়টুকু ক্যামেরাকে আপনার দিতে হবে। তাই বেশিরভাগ (আমার জানামত প্রায় সব ডিজিটাল) ক্যামেরায় শাটার বাটনটির দুটি কাজ। বাটনটিকে অর্ধেক চেপে ধরলে ফোকাস ও এক্সপোজার নির্ধারিত হয়, এরপর পুরো চেপে দিলে ছবি তোলার কাজটি শেষ হয়। আপনি যদি প্রথমবারেই বাটনটি পুরো চেপে ধরেন, হয় ক্যামেরা ছবিটি তুলবে না কারণ তার প্রাথমিক কাজ বাকী আছে; অথবা কোন কোন ক্যামেরা এমনও থাকতে পারে যে ভুলভাল এক্সপোজার ও ফোকাস দিয়েই একটি ছবি তুলে ফেলবে। তাই ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তুলতে সবসময়ই ২/৩ সেকেন্ড সময় বাটনটি অর্ধেক চেপে ধরে ক্যামেরাকে সব ঠিক করে নিতে দেবেন, এটা শেষ হলে অনেক ক্যামেরাই আপনাকে একটি সবুজ সংকেত দেবে বাটনটি পুরো চাপার, তখনই কেবল ছবিটি তুলুন।

0 comments:

Post a Comment