ফোন কড়চা-০৪

Written by Sayedur R Chowdhury 0 comments Posted in:

১৪.

দেশে যাবো দুমাসের জন্য, খামোখা ৭০ ডলার বিল কেন দেব, এই মনে করে ফোনটা ভ্যাকেশন ডিসকানেক্ট করিয়ে নিলাম, ফিরে এসে আবার চালু না করা পর্যন্ত সাময়িক বন্ধ। ফেরার পথে ঢাকা ছাড়ার আগের রাতে ফোন করে বললাম আমি কানাডা পৌঁছাবার আগেই ফোন চালু চাই, এখনি চালু করে দাও। বাজে লাইনের জন্য সব কথা ভালোমতো শুনতে পাইনি, শুধু বুঝলাম আমার ফোন চালু হয়েছে, তবে কিছু ব্যাপার আছে। বললাম, ঠিক আছে বাকি ব্যাপার পরে বুঝবো।

টরোন্টো পৌঁছেই টের পেলাম ব্যাপারটা হলো আমার শুধু ভয়েস কল করা ও রিসিভ করাটাই চালু হয়েছে; স্পার্ক১২ চালু হয়নি - তাই কলার আইডি, ইন্টারনেট, ভয়েস মেল, টেক্সট - এসব এখনো বন্ধ। উইনিপেগ ফিরে ধীরে সুস্থে ফোন করে বললাম, এবার স্পার্ক১২ টা চালু কর।
‍‍‌~ দুঃখিত, স্পার্ক১২ চালু করা যাচ্ছে না, কারণ ওটা আমাদের এখনকার অফারে নেই, ডিসকন্টিনিউড।
- কিন্তু আমিতো পুরনো কাস্টমার, আমার জন্য কেন ডিসকন্টিনিউড হবে?
~ এটাই আমাদের সিস্টেম, ভ্যাকেশন ডিসকানেক্ট থেকে ফিরলে কারেন্ট অফার থেকে প্যাকেজ নিতে হবে।
- খুব ভালো!! কি আছে এখন তোমাদের?
~ এখন আছে 'প্যাকেজ১৫', মাসে ১৫ ডলার, আগের সুবিধা সবই থাকবে শুধু ইন্টারনেট থাকবে না।
- এটা কেমন কথা? ৩ ডলার দাম বাড়লো, অথচ একটা গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা বাতিল হয়ে গেল?
~ একটা সুবিধা এখন বেশি পাবে, সেটা হলো ভয়েস মেল ৩ মেমোরী থেকে ১০ মেমোরী হয়ে যাবে।
- হুম! কিন্তু আমার নেট চাই।
‍~ তুমি যদি আরো ৪ ডলার যোগ কর, তাহলে তোমাকে লিমিটেড নেট অ্যাক্সেস দেয়া যায়।

বুঝলাম, এই পদ্ধতিতে কাজ হবে না, সরাসরি অফেন্সে যেতে হবে। বললাম, তুমি কি আমাকে বেকায়দায় ফেলে একটা দামী প্যাকেজ বিক্রি করার চেষ্টা করছো? তুমি জানো যে এটা অন্যায়।

এটা বলাতে একটু থতমত খেয়ে গেল সে। বলে নেই, এই সব কথোপকথন কিন্তু আইন অনুযায়ী রেকর্ড হচ্ছে, আমি কখনো মামলা করলে এই কথোপকথনের রেকর্ড তারা আদালতে হাজির করতে বাধ্য। একটু ভেবে বললো, কিন্তু আমিতো তোমাকে বিক্রির চেষ্টা করছিনা, আমাদের কি কি আছে তোমাকে জানালাম, নেয়া না নেয়া তোমার স্বাধীনতা।
- কিন্তু তুমিতো আমাকে একটার পর একটা অ্যাডিশনাল প্যাকেজের কথা বলে যাচ্ছো, আমার অসুবিধাটাকে তুমি এক্সপ্লয়েট করতে চাইছো। তোমার নাম বলো, আমি কনজ্যুমার্স রাইট্‌স কমিশনে কমপ্লেন করতে চাই।

আমি জানি কমপ্লেন করেও আমি কিছুই হয়তো পাবো না, কিন্তু কারো নামে কমপ্লেন হলে তার ক্যারিয়ারের বারোটা বাজবে। এটা মনে করেই এরপর সে নরম হয়ে গেল, বললো, ঠিক আছে, আমরা একটা সমাধান খুঁজতে পারি।
- কী সমাধান?
~ তুমি প্যাকেজ১৫ টা নিতে পারো, আর আমি তোমাকে আনলিমিটেড ইন্টারনেট দুবছরের জন্য কম্পানীর পক্ষ থেকে উপহার হিসাবে দিয়ে দেব; তবে কোনটাই কোনটার শর্ত নয়, জাস্ট বিজনেস রিলেশন হিসাবে এটা করা হবে।

বলাই বাহুল্য, আমার দরকষাকষিতে কাজ হয়েছে দেখে রাজি হয়ে গেলাম।

১৫.

হঠাৎ এক মাসে দেখি আমার বিল ২০ ডলার বেশি এলো। কেন অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখলাম, আমি নাকি একটা থার্ড পার্টি সার্ভিস সাবস্ক্রাইব করেছি। বলাই বাহুল্য আমার জানামতো আমি সেরকম কিছুই করিনি। মেজাজ খারাপ করে ফোন দিলাম, এটা কি সার্ভিস যা আমি সাবস্ক্রাইব করেছি দেখাচ্ছে? কী একটা নাম বললো, কী সব মিউজিক-টিউজিক।
- এই সার্ভিসের নামই এই প্রথম তোমার কাছে শুনলাম, সাবস্ক্রাইবতো দূরের কথা!
~ কিন্ত আমাদের সিস্টেম বলছে তুমি সাবস্ক্রাইব করেছো।
- কী আশ্চর্য!! ঠিক আছে, ওটা বন্ধ করে দাও।
~ আমরা বন্ধ করতে পারবোনা, তুমি যাদের সার্ভিস নিয়েছো তাদের বলতে হবে বন্ধ করার জন্য।
- আরে খোদা! নামই জানিনা আমি এই সার্ভিসের, কোথায় পাবো তাদের আমি?
~ তোমাকে আমি নামটা দিতে পারি, বাকিটা তোমাকেই খুঁজে নিতে
হবে।

বলাই বাহুল্য, সেদিন মেজাজটা খুবই খারাপ হয়েছে, ঝগড়াঝাটিও কম করিনি। কিন্তু ওপাশেও সেদিন ছিলো কোন এক 'হতচ্ছাড়ি', কিছুতেই তাকে বাগে আনতে পারলাম না। শেষমেষ তার দেয়া নাম গুগলে দিয়ে খুঁজে পেলাম সার্ভিসটি - লস অ্যাঞ্জেল্‌স ভিত্তিক এক কন্টেন্ট প্রোভাইডার; গান, রিংটোন এসব হাবিজাবি বেচে। ফোন দিলে বারবারই এক ব্যাটা ধরে শুধু স্প্যানিশে কথা বলে। মর জ্বালা! বললাম আমাকে একজন ইংরেজিভাষী দাও। শেষমেষ পেলাম একজন; বললাম বিষয়টা কী, কেন ফোন করেছি। জানতে চাইলাম, তোমাদের সার্ভিস আমার ফোনে কিভাবে সাবস্ক্রাইব হলো? এই প্রশ্নের কোন জবাব ঠিক ভাবে দিলো না ব্যাটা, বুঝলাম এরা কারসাজি করে কোনভাবে হ্যাকট্যাক করে এই কাজ করে যাচ্ছে, প্রযুক্তি ব্যবহার করে পকেটমারিং, দক্ষিণ আমেরিকান হতচ্ছাড়াগুলো আমেরিকায় কম নেই।

যাহোক এই নিয়ে বেশি ঘাটালামও না, আমার দরকার আনসাবস্ক্রাইবড হওয়া। সেটা করে দিলো, সাথে আমার ঠিকানা চাইলো আমাকে চেক পাঠাবার জন্য। দিন পনের পর দেখি সত্যিই আমার মেলবক্সে ২০ ডলার থেকে ডাকমাশুল বাদ দিয়ে বাকী টাকার একটা চেক পাঠিয়েছে।

মোবাইল মানেই যন্ত্রনা!!!!

0 comments:

Post a Comment