ফোন কড়চা-০২

Written by Sayedur R Chowdhury 0 comments Posted in:

০৪.

এরপর থাইল্যান্ডে চলে গেলাম দু'বছরের জন্য। ল্যান্ডফোন একটা থাকলেও ততদিনে মোবাইল কালচারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় একটা মোবাইলও দরকার। আরেক বাংলাদেশী তার অব্যবহৃত 1-2-Call এর একটা প্রিপেড সিম দিয়ে দিলো আমাকে। কিন্তু খরচের অবস্থা যেই কে সেই। প্রতিমিনিট ৫ বাথ (তখনকার রেটে বালাদেশী টাকায় প্রায় ৮ টাকার মতো), দেশে একটা টেক্সট করলে ১০ বাথ (১৬ টাকা), অফপিকে দেশে কল করলে ৩৩ বাথ (৫৩ টাকা), অন্য সময় ৫০ বাথ (৮০ টাকা)। খরচ-যন্ত্রনার যেন শেষ নেই।

০৫.

দেশে ফিরে এসে পুরনো ফোনগুলোই চালাতে থাকলাম। তবে যাবার আগে যে অবারিত ইন্টারনেট সুবিধা গত ৬/৭ বছর ছিলো, ফিরে এসে তা আর পেলাম না। উল্টো থাইল্যান্ডে হাইস্পীডের ইন্টারনেটের বদৌলতে নেট আসক্তিও বেড়েছে; ফলে বাসায় একটা নেট কানেকশন দরকার হলো। ততদিনে টিএন্ডটির ফোন অনেক শস্তা ও সহজলভ্য হয়েছে, ডায়াল-আপ ইন্টারনেটও শস্তাই। একবার ভাবলাম নিয়ে ফেলি একটা ফোন। পরে আবার কী মনে করে একদিনের সিদ্ধান্তেই নিয়ে ফেললাম বেসরকারী পিএসটিএন বে-ফোনস্‌-এর একটা ফিক্সড ফোন। এটার সুবিধা ভয়েস কল ও ইন্টারনেট একসাথেই চালানো যায়, ছাদের উপর একটা অ্যান্টেনা বসাতে হলো শুধু। কলচার্জ টিএন্ডটির সমান, লোকাল কল ৫ মিনিটে পালস; আর ৮০০ টাকায় সারা মাস আনলিমিটেড ইন্টারনেট। যদিও নেটের স্পীড ভয়াবহ কম, তবুতো সার্বক্ষণিক একটা ব্যবস্থা হলো! সবচেয়ে বড় আরাম যা পাওয়া গেল তা হলো - যে কোন অসুবিধায় এদের কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে 'ঝাড়ি' দেয়া যেত আচ্ছা করে, ভালোমতো ঝাড়ি দিতে পারলে কয়েক ঘন্টার মধ্যে কেউ না কেউ বাসায় চলে আসতো ট্রাবলশুটিংয়ের জন্য।

০৬.

বে-ফোনসের কারণে আমার মোবাইল নির্ভরতাও অনেকটাই কমে গেল, কথা বলার খরচও কমেছে অনেকটাই। ততদিনে মোবাইল ফোনগুলোর চার্জও কিছু কিছু কমতে শুরু করেছে; এফএনএফ, পিক-অফপিক আওয়ার হরেক রকমের কায়দা বেরুলো। তবু একদিন আমার এক প্রাক্তন ছাত্র ও তখন সহকর্মী যখন বললো, "স্যার, আপনার জন্য টেলিটকের একটা লটারী এন্ট্রি দিয়ে রেখেছি", ভাবলাম মন্দ কি? একসময় লটারীতে নাম উঠলোও (লটারীগুলো আসলে হাতে বাছাই করা হতো বলেই আমার বিশ্বাস, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে লটারীতে নাম উঠেনি এমন কোন সহকর্মী পেলাম না)। অন্য ফোনের সিম যখন মাত্র ১/২শ টাকা, তখন যদ্দুর মনে পড়ে ৩,৯০০ টাকা দিয়ে কোন এক ব্যাংকে লাইন দিয়ে সিমটি নিয়েও এলাম যথাসময়ে, আশা এবার আরো কম রেটে কথা বলবো।

কিন্তু হায়! 'সস্তার তিন অবস্থা' কথাটার সত্যতা প্রমান করার জন্যই যেন টেলিটক কম্পানীটির জন্ম। ফোনটি ভালোমতো ব্যবহারই করতে পারলাম না। ভাগ্যক্রমে আমার বাসায় নেটওয়র্ক পেলেও, শহরের বহু এলাকাতেই ফোনটি কাজ করে না নেটওয়র্ক নেই বলে, আর শহরের বাইরে গেলেতো অবধারিতভাবেই কাভারেজের বাইরে। শেষমেষ প্রায় ফেলেই রাখলাম সিমটি।

০৭.

তীব্র পানি সংকটের জন্য বাসা বদল করতে হলো আমার কিছুদিন পর। কিন্তু নতুন বাসায় গিয়েই দেখি আমার বে-ফোনসের নেটওয়র্ক নেই - কাভারেজ এরিয়ার মধ্যেই, কিন্তু পথিমধ্যে দৈত্যাকৃতি ষোলতলা এক অ্যাপার্টমেন্টের জন্য ফোনটির অ্যান্টেনা লাইন-অব-সাইটের মধ্যে আনা যাচ্ছে না। আমাদের বিল্ডিংটি মাত্র ৪ তলা। বে-ফোনসের অ্যান্টেনা টাওয়ারের সাথে লাইন-অব-সাইটে না হলে ঠিক মতো সিগনাল পায় না। কাজেই জঞ্জাল হিসাবে ফেলে রাখলাম সব যন্ত্রপাতি। ইন্টারনেট নিয়ে পড়ে গেলাম বেকায়দায়।

০৮.

এর মধ্যে এক বন্ধু কোথা থেকে গ্রামীনের দুটো কর্পোরেট প্যাকেজের সিম নিয়ে এসে একটা দিলেন আমাকে। দু'চারদিন নেট ব্যবহার করে হতাশ হয়ে ফেলে রাখলাম সিমটি। এরই মধ্যে এক সহকর্মী এলেন আমার বিভাগে - আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব একেটেলে-র কর্পোরেট গ্রাহক হয়েছে, আমি কোন সংযোগ নেব কিনা জানতে। তখন বাসায় নেট নেই, খড়কুটো যা পাই তাই আঁকড়ে ধরি এই অবস্থা আমার - তাই নিয়ে ফেললাম দুটো সিম। একটা দিলাম আবার সেই বন্ধুকেই। আমারটায় ৮০০ টাকায় আনলিমিটেড ইন্টারনেট চালু করলাম। বে-ফোনস বা গ্রামীন থেকে অনেক দ্রুতগতির নেট পেলাম। সেই কানেকশনটাই এখনো আমার বাসায় চালু আছে। বাড়তি সুবিধা যা পেলাম তা হলো - কর্পোরেট গ্রাহক হিসাবে একটু বাড়তি মনোযোগ, আর সাপোর্ট দেয়ার জন্যও কম্পানী থেকে দায়িত্ব দেয়া হলো আমাদেরই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা তাঁদের এক কর্মীকে। ফলে কাস্টমার সার্ভিস পাওয়াও অনেক সহজ হয়ে গেল, ১২৩-এ কল না দিয়ে সরাসরি সেই কর্মীকেই ফোন দেই, আর তিনি তা ডীল করেন তাঁর টেকনিক্যাল বিভাগের লোকজনের সাথে।

০৯.

আরেকটি ফোনের কথা না বললেই নয়। আমার এক আত্মীয়কে তাঁর ব্যাংকের এক ক্লায়েন্ট প্রাইভেট পিএসটিএন 'যুবক ফোন'-এর ৩/৪ টি ফোন সেটসহ উপহার দিয়েছেন, তারই একটি একসময় আমার বাসায় পৌঁছে গেল। হাতে গোনা ২০ টি কল তা দিয়ে করতে পেরেছি কিনা সন্দেহ, সেটাও এখন বাসায় কোন জঞ্জালে খুঁজলে পাওয়া যাবে, কিছুদিন আমার ছেলেমেয়ের খেলনা হিসাবে ভালো কাজ দিয়েছে অবশ্য।

১০.

কানাডায় চলে আসার আগে আগে আমার এক থিসিস স্টুডেন্ট পাশ করে বেরিয়ে ওয়ারিদ টেলিকমের একটি প্রশাসনিক পদে নিয়োগ পেয়েছে। সে বললো, স্যার আপনাকে একটা ওয়ারিদ সিম দেই, নেট ব্যবহার করেও আরাম পাবেন। বললাম, ভাই, অনেক হয়েছে; দশ বছরে ছ'টা কম্পানীর দশটা ফোন ব্যবহার করে ফেলেছি। এই খবর পেলে পরে ফোন কম্পানীগুলো আমাকে আর ফোনই বেচবে না।

0 comments:

Post a Comment