শক # ১৩

ভ্যাঙ্ক্যুভার বিমান বন্দর থেকে বেরিয়ে জীবনের প্রথম কানাডায় পা রাখলাম মাত্র। যাবো উইনিপেগ, তবে যাবার আগে ভিক্টোরিয়াতে একটা কনফারেন্সে যোগ দেবো। তাই ভ্যাঙ্ক্যুভার থেকে উইনিপেগের ডোমেস্টিক ফ্লাইট না ধরে বিমান বন্দরের বাইরে এলাম। উদ্দেশ্য ভিক্টোরিয়াগামী প্যাসিফিক কোচের বাস ধরবো। দেশ ছাড়ার আগেই ইন্টারনেটে পুরো রিসার্চ করে যাত্রা শুরু করেছি, তাই আমার কাছে জলের মত পরিষ্কার ভিক্টোরিয়া কিভাবে যেতে হয়। এমনকি ভিক্টোরিয়ায় হোটেল বুকিং, ৩দিন পর ভিক্টোরিয়া থেকে উইনিপেগের ফ্লাইট বুকিং সব দেশে থেকেই সেরে ফেলেছি। শুধু ভিক্টোরিয়া যাবার বাস টিকেটটি বিমানবন্দরের ভেতরে তাদের সেলস কাউন্টার থেকে কিনে নিলাম। এখন সামান্য অপেক্ষা প্যাসিফিক কোচের বাসটি বিমানবন্দর অ্যারাইভালের পিক-আপ জোনে এসে পৌঁছার। আমার সাথে দুটো হাতব্যাগ ছাড়াও ঢাউস সাইজের ৬৪ কেজি ওজনের দুটো লাগেজ। একটু পরেই আলিশান বাসটি এসে দাঁড়ালো সামনেই। দৈত্যাকৃতি ড্রাইভার নেমে আসতেই তাকে টিকেট দেখিয়ে জানালাম আমিও একজন প্যাসেঞ্জার। বললো, উঠে পড়ো। আমার বড় বড় লাগেজ দুটো দেখিয়ে দিতেই বললো, ট্যাগ লাগাও। আরে বাবা, নিজেকেই লাগাতে হয় নাকি! যাহোক পাশের পিক-ওয়ান বক্স থেকে ট্যাগ খুঁজে নিয়ে নাম লিখে পরিয়ে দিলাম হাতলে। বললাম, নাও আমার ব্যাগ। বাসের লাগেজ কম্পার্টমেন্ট খুলে দিয়ে সে বললো, লোড করো। আমারতো আক্কেল গুড়ুম, বলে কী! নিজেকেই ঐ খানে ঢুকে পড়ে লাগেজ তুলতে হবে বাসে? :O

শক # ১৪

আমার পাশেই অপেক্ষমান ছিলেন মাঝবয়সী এক মহিলা যাত্রী, কানাডিয়ই হবেন। তারও একটি হাতব্যাগ আর একটি লাগেজ। আমারগুলোর মত বড় নয়, মাঝারী মাপের স্যুটকেট। লাগেজ কম্পার্টমেন্টে নিজের লাগেজগুলো ঠিকঠাক সেট করে বেরিয়ে আসার মুখেই দেখলাম মহিলা নিজের লাগেজটি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন কম্পার্টমেন্টের মুখেই। জানি না কি বলা দরকার। তবু বলে ফেললাম, দাও তোমারটাও। মহিলা একটু যেন বিরক্তই হলেন। বললেন, ধন্যবাদ, আমি নিজেই আমারটা তুলবো। আমি বেরিয়ে আসার পর হামাগুড়ি দিয়ে মহিলা ঢুকে পড়লেন লাগেজ কম্পার্টমেন্টে। পরে ভিক্টোরয়াতে সেই কনফারেন্সেই মহিলার সাথে ভালো করে পরিচয় হলো। তিনি ইউনিভার্সিটি অব বৃটিশ কলাম্বিয়ার অধ্যাপক। সেদিনের দৃশ্যটি একবার ভাবলাম - বৃটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী অধ্যাপক হামাগুড়ি দিয়ে মাল টানছেন বাসের খুপরিতে। :O :O

শক # ১৫

ভিক্টোরিয়া ও ভ্যাঙ্ক্যুভার হলো কানাডার সবচেয়ে মৃদু আবহাওয়ার এলাকা। একদিকে প্রশান্ত মহাসাগর অন্যদিকে রকি মাউন্টেন এ এলাকাটিকে তীব্র শীত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে। পীক উইন্টার জানুয়ারীর ১৫ তারিখে যখন ভিক্টোরিয়া ছাড়ছি তখন সেখানে তাপমাত্রা ১ ডিগ্রী, ঝিরঝির বৃষ্টিও হচ্ছিলো। এয়ার কানাডার ফ্লাইট না নিয়ে নিয়েছি ওয়েস্ট জেটের। এরা অনফ্লাইট অ্যানাউন্সমেন্টগুলোয় রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থাটির মতো অত ফর্মাল ভাষা ব্যবহার করে না। তাই ক্যাপ্টেন যখন ঘোষনা দিলো আমাদের গন্তব্য উইনিপেগে নামার
সময় তাপমাত্রা হবে শুন্যের নিচে সাতাশ, উত্তুরে বাতাসের কারণে অনুভূত হবে -৩৮ এর মতো, তার ভাষায় 'গেট ইওরসেল্ফ রেডী ফর আ বাট-কিকিং কোল্ড' (পশ্চাদ্দেশে লাথি খাওয়ার মত ঠান্ডার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে নিন), তখনো এই বাট-কিকিং-এর মর্মার্থ আমার কাছে পরিষ্কার ছিলো না। ভয়ের চোটে চোখদুটো ছাড়া আর সব যখন আরো একপরত গরম কাপড় দিয়ে ঢাকছিলাম, এক সহযাত্রী হেসে বললো, "লুকস লাইক ইউ'র গনা টেক আ নর্দার্ন (মেরু) ট্রিপ, ডোন্ ওয়রী ম্যান, ইটস্ জাস্ট মাইনাস টুয়েন্টী সেভেন।" জাস্ট মাইনাস টুয়েন্টী সেভেন?! :O :O :O

পুরনো পর্বঃ
১. শক্‌ড অ্যাব্রোড-০১
২. শক্‌ড অ্যাব্রোড-০২
৩. শক্‌ড অ্যাব্রোড-০৩
৪. শক্‌ড অ্যাব্রোড-০৪

0 comments:

Post a Comment