It is going to be a humongous project, taking decades to reach its final phase; nevertheless the cabinet has in principle given green signal for going ahead with the proposed Sonadia Island Deep Sea Port recently. I never had a question in mind whether we need a facility like this; however, I wonder if the cabinet can give a ‘go ahead’ without repealing the Ecologically Critical Area (ECA) declaration first. Sonadia Island has been declared by the Director General of the Department of Environment as an ECA in 1999 along with six other sites under the provisions of the Bangladesh Environmental Conservation Act, 1995 (BECA, 95). The declaration as an ECA was understandably justifiable considering the fact that it was “threatened to reach a critical state” in terms of ecosystems, and the need for conservation as a national wealth and for future generations. Sonadia Island received importance as a candidate for ECA for its last remnants of mangrove forest in the eastern coast of Bangladesh, which is phenomenally different than the Sundarbans and all its artificially forested cousins in its species composition and salt tolerance. It has been the house of a large number of birds including some rare migratory species which were spotted only here, turtles, crabs, and molluscs including the largest oysters more than 30 years old again found here alone. It was no surprise that the Island and its ecosystems were taken into account for protection and conservation, but now it is surprising how the cabinet writes a death sentence while the BECA, 95 and ECA declaration are still in effect. I wonder whether the cabinet can disregard an existing law and legal statute made under a law. Without reverting the ECA declaration giving a green signal for the Deep Sea Port at Sonadia Island must be considered a dismal disregard of Law by the cabinet. So am I asking for repeal here? Yes, and No. To remain legally appropriate the cabinet must first arrange a repeal of the ECA declaration, but then again the government must convince its people that the ECA declaration was made based on ‘false’ judgments at the first place, or the critical conditions have changed since 1999 to call for a withdrawal of status – neither of which, I suppose, would be scientifically justifiable. Here is why a ‘No’ for a repeal of law, ‘No’ for a shovel in Sonadia.
১৯৬২ সালে আমেরিকাতে একটি ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটলো। র্যাচেল কার্সন নামের এক নারী লেখক ও সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী তাঁর চার নম্বর বইটি প্রকাশ করলেন। আগেই তিনি ভালো লেখক হিসাবে সুনাম কুড়িয়েছেন সমুদ্র নিয়ে তিন তিনটি খুব জনপ্রিয় বই লিখে। কিন্তু এবারের বইটি সাড়া ফেলে দিলো অন্যরকম। এবার আর সমুদ্র নিয়ে নয়, লিখলেন একেবারে নতুন একটি বিষয় নিয়ে।
বেশ কিছু বছর ধরেই কৃত্রিম ও রাসায়নিক কীটনাশক বিষের ব্যবহার নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন র্যাচেল। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর উপর এসব বিষের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে তিনি অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রবন্ধ এর মধ্যে পড়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার সামরিক বাহিনীর টাকায় অনেক রকমের কীটনাশক উদ্ভাবন করা হয় বিভিন্ন গবেষণাগারে। এর অনেকগুলোই ফসলের উপর প্রয়োগ করা শুরু হয় সে সময় থেকেই। বিষগুলো ফসলের মাঠে দেয়া হয় ফসলের জন্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গকে মেরে ফেলার জন্য, কিন্তু কীটপতঙ্গ খেয়ে জীবন ধারণ করে যেসব পাখি ও অন্যান্য প্রাণী, তারা এসব বিষাক্ত ও মৃত পোকামাকড় খেয়ে মরে যেতে থাকলো। যে ফসলে বিষ দেয়া হচ্ছে সে ফসল ও খাদ্য থেকে কিছু কিছু বিষ মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ক্যান্সার ও অনেক অজানা রোগ সৃষ্টি করতে লাগলো মানবদেহে। প্রায় এক যুগ র্যাচেল তাঁর উদ্বেগ চেপে রেখে দেখে যেতে লাগলেন আর পড়তে লাগলেন বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য বিষয়ের প্রবন্ধগুলো। এর মধ্যে ১৯৫৭ সালে আমেরিকার কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) ফসলের মাঠে পিপড়া মারার জন্য বড় ধরনের অভিযান শুরু করলো। তারা পিপড়া মারার জন্য ডিডিটি পাউডার নামের খুব বিষাক্ত একটা রাসায়নিক পদার্থ এক রকমের তেলের সাথে মিশিয়ে বিমান থেকে যত্রতত্র ছিটিয়ে দিতে শুরু করলো। যাদের জমিতে এই বিষ ছিটানো হলো তারা প্রায় সকলেই এর ক্ষতিকর প্রভাব টের পেতে শুরু করলেন। র্যারচেল ঠিক করলেন, আর নয়, এ নিয়েই পরের বইটি লিখবেন।
শুরু হলো র্যাচেলের ব্যাক্তিগত গবেষণা। তিনি ডিডিটি ও অন্যান্য বিষের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধগুলো পড়ার পাশাপাশি যেসব জায়গায় বিষের ক্ষতির প্রমান পাওয়া গিয়েছে সেসব উদাহরণ হিসাবে জোগাড় করতে শুরু করলেন। নিজে সরকারী একটি বিভাগের বিজ্ঞান লেখক হিসাবে কাজ করার সুবাদে তাঁর সাথে অনেক সরকারী বিভাগের বিজ্ঞানীদের সাথে যোগাযোগ ছিলো, সেসব বিজ্ঞানীদের কাছ থেকেও পরিবেশের উপর এসব বিষ প্রয়োগের কুফল বিষয়ে তথ্য-প্রমান এবং মতামত সংগ্রহ করতে শুরু করলেন র্যা চেল। টানা চার বছর গবেষণা করার পর যে বইটি লিখলেন, তার নাম দিলেন ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’ বা নীরব বসন্ত।
বইয়ের অষ্টম অধ্যায়ে র্যাচেল লিখেছেন কিভাবে ডিডিটি, হেপ্টাক্লোর, এনড্রিন, ডাইয়েলড্রিন – এসব কীটনাশক ছিটানোর ফলে গাছপালা, উপকারী কীটপতঙ্গ, এমনকি মাটি ও কেঁচো বিষাক্ত হয়ে যাবার প্রমান মিলেছে, আর কেঁচোর উপর নির্ভরশীল শত শত পাখি হারিয়ে গিয়েছে কোন কোন এলাকা থেকে। বিষের প্রভাবে হয় তারা মারা পড়েছে দলে দলে, নয়তো তাদের ডিম দেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, অথবা ডিম দিয়েছে কিন্তু বিষের ক্রিয়ায় ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়নি। এভাবে পাখির কলকাকলীতে মুখর আমেরিকার অনেক অঞ্চল পাখিহীন মৃতপুরীর মতো হয়ে গিয়েছিলো। এই অধ্যায়টিরই প্রথমে র্যাহচেল নাম দিয়েছিলেন ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’। পরে গোটা বইটিরই নাম ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’ দিয়ে অধ্যায়টিকে নাম দেন ‘অ্যান্ড নো বার্ডস সিং’।
প্রকাশের পর পরই বইটি অনেক সেরা বইয়ের তালিকায় স্থান পেয়ে গেলো। কেউ কেউ বইটিকে ‘সর্বকালের সেরা পঁচিশ বিজ্ঞানের বই’-এর তালিকায় স্থান দিয়েছেন। আরেকদল একে স্থান দিয়েছেন ‘ইতিহাস বদলকারী ৬০টি বই’-এর তালিকায়। এসব তালিকায় আরো যেসব বই স্থান পেয়েছে সেগুলো হলো মহাবিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, বিজ্ঞানী আইজাক নিউটন, জোতির্বিদ কোপার্নিকাস, বিবর্তন তত্ত্বের জনক ডারউইন-এর মতো মহামনীষীদের লেখা বইগুলো। কাজেই বোঝাই যায় আমাদের দেশে খুব একটা নাম শোনা না গেলেও র্যাচেল কার্সন ও তার বইয়ের একটি বিরাট ভুমিকা রয়েছে মানবমঙ্গলে।
এই বইটি পড়ার পরই আমেরিকার মানুষের মধ্যে বড় ধরনের একটি জাগরণ তৈরী হলো। মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে এসব বিষাক্ত পদার্থ নির্বিচারে ব্যবহারের বিরুদ্ধে এবং সব ধরণের পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলন শুরু করলো। দশ বছর আন্দোলনের পর অবশেষে আমেরিকায় ১৯৭২ সালে ডিডিটি-র ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষনা করলো সরকার। এসব আন্দোলনের ফলেই আমেরিকা সরকার সেদেশে ‘এনভায়রনমেন্ট প্রটেকশন অ্যাজেন্সী’ বা পরিবেশ সংরক্ষণ বিভাগ চালু করলো; এবং বায়ু, পানি, মাটি এসব দূষণ বন্ধ করতে বিভিন্ন আইন জারী করলো। বলা হয়ে থাকে র্যা চেল কার্সনের সাইলেন্ট স্প্রীং বইটিই আমেরিকাতে ও পরে বিশ্বের অন্যান্য দেশে পরিবেশ আন্দোলনের সূচনা করেছিলো। এ কথা সত্য যে এই বইটিরও অনেক আগে থেকেই কিছু কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন ও আন্দোলন আমেরিকা ও ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশে পরিবেশের উপর মানুষের অপিরনামদর্শী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলো, কিন্তু এই বইটি পড়ে আমেরিকায় ব্যবকহারে ডিডিটি ও দূষণ বিরোধী যে গণজোয়ার তৈরী হয়েছিলো তা এর আগের কয়েক দশকেও দেখা যায়নি। যে সব কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান এসব বিষাক্ত দ্রব্য উৎপাদন করতো আগে কখনো পরিবেশ আন্দোলনের ফলে তাদেরকে উৎপাদন বন্ধ করে দেয়ার মতো অবস্থায় পড়তে হয়নি, কিন্তু এবারই প্রথম তাদের ব্যবসা রীতিমতো বন্ধ হবার উপক্রম হলো। মনে হতে পারে যে শিল্প উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি দেশের জন্য ক্ষতিকর, কিন্তু আসলেই কি তাই? পৃথিবীর কোন বিবেকবান মানুষ কি অস্ত্র, গোলাবারুদ, মিসাইল ও পারমানবিক বোমার উৎপাদনের জন্য কারখানা দেখতে চায়? এসব কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়াই মানুষের জন্য মঙ্গল। তাই বিষাক্ত পদার্থের উৎপাদন বন্ধ হওয়াও সে সময় পরিবেশ সচেতন ও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ মঙ্গল মনে করেছেন। কিন্তু যারা এসব কারখানার মালিক তারা আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করতে সবসময়ই নারাজ। তাই তারা র্যারচেল কার্সনের বিরুদ্ধে পাল্টা অপপ্রচার চালানো শুরু করলো। অনেক টাকার বিনিময়ে তারা পত্রিকায় কলাম লেখক থেকে শুরু করে কিছু কিছু লোভী বিজ্ঞানীকে পর্যন্ত হাত করে ফেললো র্যাচেলের বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রকাশ করার জন্য। বিজ্ঞান যখনই কিছু সত্য প্রকাশ করে তখনই সেই সত্য দিয়ে কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরকম ঘটেছিলো গ্যালেলিও গ্যালিলাই-এর সময় – যখন তিনি বললেন সূর্যকে ঘিরে পৃথিবী ও অন্য গ্রহগুলো ঘোরে, তখন গির্জার পাদ্রিরা ক্ষতিগ্রস্থ হতে যাচ্ছিলেন, তাই তাঁরা দন্ড দিলেন গ্যালেলিওকে। একই রকম ঘটনা এর পরেও অনেকবার ঘটেছে। যখন বিজ্ঞান প্রমান করলো ধূমপান খুব ক্ষতিকর, তখনও তামাক ও সিগারেট ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে অনেক টাকার বিনিময়ে কিছু পত্রিকা লেখক ও লোভী নীতিহীন বিজ্ঞানীকে দিয়ে প্রচার চালিয়েছে অনেক বছর যে ধূমপানে কোন ক্ষতি হয় না। এখনও বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের ফলে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে বন্যা, খরা, ঘুর্ণিঝড় এসব দূর্যোগ বেড়ে যাওয়ার কথা যখন বলছেন বিজ্ঞানীরা, তখন তেল ও কয়লা ব্যবসায়ীরা ক্ষতির ভয়ে টাকা দিয়ে লোক লাগিয়ে দিয়েছে বিজ্ঞানকে ভুল বলে প্রচার করার জন্য। র্যাচেলের ক্ষেত্রেও এক শ্রেণীর রাসায়নিক ব্যবসায়ী উঠে পড়ে লেগেছিলেন তাঁর বইটি ভুল প্রমান করার জন্য। কিন্তু আনন্দের কথা, মানুষের আন্দোলন ও বিজ্ঞানের অকাট্য প্রমানের কাছে তাদের ঠুনকো যুক্তিগুলো খুব বেশিদিন টেকেনি।
র্যাচেলের বইয়ের ছয় বছর পর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো ১৯৬৮ সালের ডিসেম্বরে অ্যাপোলো ৮ নভোযানের অভিযান। আমরা সবাই জানি অ্যাপোলো ১১ অভিযানে মানুষ প্রথম চাঁদে অবতরণ করেছিলো। কিন্তু এর আগে অনেকগুলো পরীক্ষামূলক মহাকাশযাত্রা করতে হয়েছিলো নভোচারিদের। অ্যাপোলো ৮ অভিযান ছিলো তেমনই একটি পরীক্ষামূলক যাত্রা। এই অভিযানটিই ছিলো পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে মহাকাশে মানুষের প্রথম অভিযান। এর আগে মানুষ মহাকাশে গিয়েছে কিন্তু পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে যায়নি। এই অভিযানে মাহকাশযানটি চাঁদেও চলে গিয়েছিলো, শুধু ‘লুনার মডিউল’ নামের বিশেষ যানটি তখনো তৈরী হয়নি বলে এ যাত্রা চাঁদে নামতে পারে নি। তাই এই অভিযান চাঁদে যাবার প্রস্ততি হিসাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অন্য যে তুচ্ছ কারণে এই অভিযানটি পরে খুব মর্যাদাপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তা ছিলো এই অভিযানেই প্রথম নভোচারিরা বাইরে থেকে পৃথিবীটাকে ছোট্ট একটা গ্রহ বা উপগ্রহের মতো দেখতে পেয়েছিলেন, ঠিক যেমন আমরা পৃথিবী থেকে চাঁদকে দেখি।
অ্যাপোলো ৮ মহাকাশযানটি যখন চাঁদকে ঘিরে চক্কর দিচ্ছিলো এবং পরবর্তীতে চাঁদে নামার উপযোগী স্থানের সন্ধানে চাঁদের পিঠের ছবি তুলছিলো, তখনই হঠাৎ অভিযানের দলনেতা ফ্র্যাঙ্ক বোরম্যান কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরে খেয়াল করলেন চাঁদের দিগন্ত বরাবর ছোট্ট নীল অদ্ভুৎ সুন্দর পৃথিবীটিকে দেখা যাচ্ছে, ঠিক যেন চাঁদের মাটিতে পৃথিবী উদিত হচ্ছে। তখনই তিনি এর একটি ছবি তুললেন সাদা কালো ছবির ক্যামেরায়। তাঁর পাশেই ছিলেন দলের অন্য অভিযাত্রী উইলিয়াম অ্যান্ডার্স। উইলিয়ামের হাতে ছিলো রঙ্গিন ছবির ক্যামেরা, তিনি তুললেন রঙ্গিন ছবি। এই রঙ্গিন ছবিটিই পরে ‘দ্য আর্থরাইজ’ বা পৃথিবীর উদয় নামে বিখ্যাত হয়ে যায়।
উইলিয়াম অ্যান্ডার্সের তোলা দ্য আর্থরাইজ (১৯৬৮), ঘড়ির কাঁটার দিকে নব্বই ডিগ্রী ঘোরানো হয়েছে
স্থির ছবির ইতিহাসে মানবসমাজকে সবচেয়ে প্রভাবিত করেছে যে ছবিগুলো পরবর্তীতে এই ছবিটি সেগুলোর অন্যতম একটি হয়ে ওঠে। কারণ এই ছবিটি দেখেই মানুষ চোখের সামনে দেখতে পেলো পৃথিবী আসলে কত ছোট্ট, বিশাল মহাকাশের গায়ে পৃথিবী কতটা ভঙ্গুর, কতটা নাজুক। যারা এতদিন বিশ্বাস করে এসেছিলো পৃথিবীটা বিশাল, মানুষের যে কোন আঘাত ও চাপ সইবার ক্ষমতা পৃথিবীর আছে, তারা হঠাৎ করেই বুঝতে পারলেন আসলে পৃথিবী খুবই ছোট, মানুষ যদি এই ছোট্ট পৃথিবীটিকে ঠিকমতো যত্ন না নেয়, যদি পৃথিবীর উপর যেমন খুশি অত্যাচার চালায় তবে পৃথিবীর ভেঙ্গে পড়তে খুব সময় লাগবে না। ছবিটি দেখে তারা আরো বুঝতে পারলেন, যদি আমাদের পৃথিবী মানুষের চাপ সহ্য করতে না পেরে মুষড়ে পড়ে, এই বিশাল মহাকাশে ধারেকাছে আমাদের যাবার মতোও আর কোন জায়গা নেই। মানুষ এও বুঝতে পারলো, যে বায়ুমন্ডকে আমরা বিশাল বায়ুর সমুদ্র মনে করতাম, আসলে তা পৃথিবীকে ঘিরে খুবই পাতালা ঠুনকো একটি খোসার মতো, মানুষের কোন কোন প্রযুক্তির যেরকম ক্ষমতা হয়েছে, ঠিকভাবে যত্ন না নিলে এই পাতলা খোসাটি যে কোন সময় ছিড়ে যেতে পারে। নীল সমুদ্র, সবুজ বনানী, সাদা মেঘমালা, আর নীলচে বায়ুমন্ডল দিয়ে ঘেরা এত অপরূপ সুন্দর আর মানুষ বাসের উপযোগী যে আর কোন গ্রহ-উপগ্রহ মানুষের দৃষ্টিসীমায় নেই সেটাও মানুষ উপলদ্ধি করলো। কাজেই শুধু বিজ্ঞানীরা নন, সাধারণ মানুষের মধ্যেই পৃথিবীর প্রতি অদ্ভুৎ একটি মায়া জন্মাতে সাহায্য করলো এই ছবি, যারা পৃথিবীর যত্ন নেয়ার প্রয়োজনের ব্যাপারে এতদিন সন্দেহে ছিলেন তাদেরও অনেকের সে সন্দেহ দূর হয়ে গেল। শক্তিশালী হলো মানুষের পরিবেশ সংরক্ষণের তাগিদ, আন্দোলন ও সংগ্রাম। অনেক বেশি সংখ্যায় মানুষ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনে যোগ দিতে থাকলেন। আমেরিকা ছাড়িয়ে এই বোধদয় ছড়িয়ে গেলো বিশ্বময়।
তৃতীয় আর একটি ঘটনা দিয়ে শেষ করবো মানুষের পরিবেশ চেতনা জাগরনের গল্প। তিনি ছিলেন আমেরিকার উপ-রাষ্ট্রপতি (ভাইস প্রেসিডেন্ট)। আট বছর উপ-রাষ্ট্রপতি থাকার পর ২০০০ সালে আবার নির্বাচন করলেন রাষ্ট্রপতি হবার জন্য। প্রায় জিতেও গিয়েছিলেন, কিন্তু দুঃখজনক কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে আদালতের রায়ে তাঁকে রাষ্ট্রপতি হতে দেয়া হলো না, রাষ্ট্রপতি হলেন জর্জ ডব্লিও বুশ। হেরে গিয়ে তিনি রাজনীতি থেকে বিদায় নিলেন, ফিরে গেলেন পড়াশোনা ও ব্যক্তিগত গবেষণায়। অতিমাত্রায় কার্বন ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমনের ফলে বায়ুমন্ডলের যে তাপমাত্রা বাড়ছে, আর তার ফলে বাড়ছে পৃথিবীর সমুদ্রের পানির উচ্চতা, মানুষের অপিরনামদর্শী কর্মকান্ডের ফলে জলবায়ুর যে পরিবর্তন হচ্ছে আর তার ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বন্যা, খরা, ঘুর্ণিঝড়সহ নানা ধরনের দূর্যোগ হচ্ছে এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলোকে তিনি জড়ো করা শুরু করলেন। এর আগেও তিনি এসব বিষয়ে অনেক পড়াশোনা করেছেন, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তখন, ভাইস প্রেসিডেন্ট হবার আগে যখন সিনেটর (সংসদ সদস্যের অনুরূপ) ছিলেন তখনও। যাঁর কথা বলছি তাঁর নাম অ্যালবার্ট আর্নল্ড আল গোর, সংক্ষেপে শুধু আল গোর হিসাবে বেশি পরিচিত।
ছাত্রজীবনেই তিনি পরিবেশের এই বিশেষ সমস্যাটি নিয়ে খুব আগ্রহ বোধ করতে শুরু করেন। পরে যখন আমেরিকার কংগ্রেস (সংসদের নিম্নকক্ষ) ও সিনেটের (সংসদের উচ্চকক্ষ) সদস্য ছিলেন তখন তিনি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমানোর জন্য সবসময়ই সোচ্চার ছিলেন। যখন তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন, তখনও প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে সবসময়ই পরিবেশ সহায়ক আইন তৈরীর কাজে উৎসাহ দিয়েছেন, সহায়তা করেছেন। ২০০০ সালে রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার পর পুরো সময়টাই ব্যয় করতে শুরু করলেন এই উদ্দেশ্যে। বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ব্যাপারে সেসময় পাওয়া সব বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমান এবং পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে এর ক্ষতির অনেক আলামত ছবি ও ভিডিও আকারে তিনি সংগ্রহ করলেন। এসব ছবি, ভিডিও, ও তথ্যগুলো দিয়ে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও যত্ন নিয়ে তিনি বানালেন একটি পাওয়ার-পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন। এই প্রেজেন্টেশনটির সাথে নিজস্ব আকর্ষণীয় ঢংয়ে তিনি দেশে বিদেশে বক্তৃতা দিয়ে মানুষকে এই বিষয়ে সচেতন করে তোলার কাজ শুরু করলেন। এই একই বক্তৃতা তিনি প্রায় ৪০০ বার দিয়েছেন বিভিন্ন স্থানে। তেমনই একটি টাউন হল মিটিংয়ে তাঁর এই বক্তৃতাটি শুনে ও প্রেজেন্টেশনটি দেখে --- ভাবলেন এই বক্তৃতাটি দিয়েই খুব ভালো একটি তথ্যচিত্র (ডকুমেন্টারী ফিল্ম) বানানো যায়। তাঁরা আল গোরের সম্মতি নিয়ে নিজ উদ্যোগেই যোগাযোগ করলেন চিত্রনির্মাতা ---- এর সাথে। অবশেষে আল গোরের বক্তৃতাটি ‘অ্যান ইনকনভেনিয়েন্ট ট্রুথ’ বা ‘একটি অপ্রিয় সত্য’ নামে তথ্যচিত্র হিসাবে মুক্তি পেলো ২০০* সালে। আর মুক্তি পেতে না পেতেই একেবারে বাজিমাত করে দিল ছবিটি।
-------------------------------------------------------
এই পর্বগুলো লিখতে গিয়ে দুটি ব্যাপার ঘটেছে; এক. টিপস দিতে গিয়ে মনে হলো অল্প কিছু তাত্ত্বিক আলোচনা ছাড়া টিপসগুলো খুব ভালোভাবে বোঝাতে পারছিনা, তাই তত্ত্বগুলো চলে আসতে থাকলো; দুই. তাত্ত্বিক বিষয় লিখতে গিয়ে মনে হলো শুরুতে যে শিরোনাম দিয়ে লেখাটি শুরু করেছিলাম, সেই শিরোনাম এখন আর যথার্থ রইলোনা। ভাবছি লিখার নাম 'ডিজিটাল ফটোগ্রাফী' করে দেব কিনা। আপনাদের মতামত পেলে খুশি হব।
-------------------------------------------------------
ডিজিটাল ছবি কী-২?
গত পর্বে 'ডিজিটাল ছবি কী' তার একটি খন্ডিত জবাব দিয়েছিলাম এভাবে -
১। ডিজিটাল ছবি বা ইমেজ হলো অনেকগুলো পিক্সেলের সমষ্ঠি।
২। পিক্সেলগুলো সারি ও কলাম হিসাবে সাজানো থাকে।
৩। প্রতিটি পিক্সেলের নিজস্ব 'রঙ' (রঙ্গীন ছবির ক্ষেত্রে) এবং উজ্জ্বলতা (রঙ্গীন ও সাদাকালো উভয় ছবির ক্ষেত্রে) আছে।
তবে ডিজিটাল ছবির এটাই প্রধান পরিচয় নয়। যে কোন সাধারণ ব্যবহারকারীর কাছে ডিজিটাল ছবি হলো একটি কম্পিউটার ফাইল, সচরাচর যার এক্সটেনশান হয়ে থাকে JPG (বা JPEG = Joint Photograhic Expert Group)। কোন কোন ক্যামেরা ছবিকে TIF (বা TIFF = Tagged Image File Format), raw (বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ক্যামেরায় বিভিন্ন এক্সটেনশান), DNG (Digital NeGative) এসব ফর্ম্যাটেও রেকর্ড করতে সক্ষম।
ডিজিটাল ছবি (আরো ব্যাপকার্থে বলতে গেলে ডিজিটাল ইমেজ) হলো একটি সংখ্যা-ম্যাট্রিক্স (সারি ও কলাম আকারে সাজানো কিছু সংখ্যামাত্র)। এই ম্যাট্রিক্সটিকে (সংখ্যাগুলোকে) সেভ করার জন্য একটা ফাইল দরকার, এবং তা উপরের যে কোন একটি ফাইল ফর্ম্যাটে রাখা যায়। নিচের ছবিটি দেখুন, কতগুলো সংখ্যা সাজানো আছে।
গত পর্বে বলেছিলাম পিক্সেল কী ও কিভাবে তা সারি ও কলাম আকারে মোজাইকবদ্ধ হয়ে ছবির রূপ দেয়। এই সংখ্যাগুলি হলো প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি পিক্সেলের উজ্জ্বলতা (Brightness/Luminiscence)। বেশিরভাগ সস্তা ক্যামেরা ২৫৬ টি ধাপে উজ্জ্বলতা রেকর্ড করতে পারে, ০ (শুন্য) হলো সবচেয়ে কম উজ্জ্বলতা (নিকষ কালো) এবং ২৫৫ হলো সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বলতা (পুরোপুরি সাদা)। মাঝামাঝি যে কোন সংখ্যা হলো সাদা ও কালোর মাঝামাঝি একটি ধুসর রং, গাঢ় থেকে হালকা। নিচের ছবিটি দেখুন -
এই ছবিতে দেখানো হয়েছে সংখ্যার মান ০ থেকে বেড়ে ২৫৫ হতে হতে কিভাবে উজ্জ্বলতাও বেড়ে কালো থেকে সাদাতে রূপ নেয়। এটাকেই বলা হয় গ্রে-স্কেল, হয়তো অনেকে নাম শুনে থাকবেন। তাই সাদা-কালো ছবিকে গ্রে-স্কেল ছবিও বলা হয়।
এতক্ষণ যা বললাম, আসলে ঠিক উল্টোভাবে বললাম, কারণ সংখ্যার কারণে উজ্জ্বলতা নির্ধারিত হয় - এ কথাটি যতটা সত্য, তারচেয়ে বেশি সত্য হলো যেটুকু উজ্জ্বলতা ক্যামেরা পরিমাপ করে সেই অনুযায়ী সংখ্যা নির্ধারণ করে। এই সংখ্যা নির্ধারণের প্রক্রিয়ার নাম ডিজিটাইজেশান। ক্যামেরার লেন্স দিয়ে যখন আলো প্রবেশ করে তখনো ছবিটি অ্যানালগ থাকে, যেই মাত্র ক্যামেরা ডিজিটাইজেশান সম্পন্ন করে, তখনই ছবিটি ডিজিটাল হয়ে যায়। প্রতিটি পিক্সেলের জন্য ডিজিটাইজেশান সম্পন্ন করার পর ক্যামেরার সফটওয়্যার এই সংখ্যা ম্যাট্রিক্সটিকে একটি ফাইলে সেভ করে, সেটাকেই আমরা ডিজিটাল ছবি হিসাবে পেয়ে থাকি।
এবার নিচের ছবিটি দেখুন। বামদিকে আছে যে দৃশ্যটির ছবি তোলা হচ্ছে তা, দৃশ্যে উজ্জ্বলতার তারতম্য লক্ষ্য করুন। এই উজ্জ্বলতার তারতম্য অনুযায়ী ক্যামেরার সফটওয়্যার একটি ডিজিটাল সংখ্যা-ম্যাট্রিক্স তৈরী করেছে, যা মাঝখানে দেখিয়েছি। এই সংখ্যা-ম্যাটিক্সটিই যখন আমরা ক্যামেরার ডিসপ্লে বা কম্পিউটারে দেখি তা দেখায় ডানদিকের ছবিটির মতো (৯ পিক্সেলের ছবি)।
বলা বাহুল্য উপরের ছবিটি কোন সত্যিকারের ক্যামেরায় তোলা ছবি নয়। কিন্তু এবার একটি সত্যিকারের ছবির সংখ্যা-ম্যাট্রিক্সটি দেখুন নিচে (সংখ্যাগুলো পড়ার মতো বড় করে দেখার জন্য ছবির উপর ক্লিক করুন)। এটি একটি ৫০x৫০ ম্যাট্রিক্স অর্থাৎ ২৫০০ পিক্সেলের ছবি।
এই সংখ্যা-ম্যাটিক্সটি ছবি নিচের দেখুন-
১০ গুণ বড় করে দেখুন -
এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কেন ডিজিটাল ছবিকে ডিজিটাল বলা হয়, কিভাবে ক্যামেরা ডিজিটাল ছবি তৈরী করে, আর কিভাবে আমরা তা দেখতে পাই। কিন্তু এ পর্যন্ত যা আলোচনা করলাম তাতে একটি সাদাকালো (গ্রে-স্কেল) ছবির ব্যাখ্যা পাওয়া গেলো, কিন্তু রঙিন ছবি কিভাবে আসে? আশা করি পরের পর্বে রঙিন ছবি নিয়ে আলোচনা করবো।
পূর্ববর্তী পর্বসমূহ:
শখের ছবিয়ালের টিপস-০১
শখের ছবিয়ালের টিপস-০২
শখের ছবিয়ালের টিপস-০৩
শখের ছবিয়ালের টিপস-০৪
পূর্ববর্তী পর্বসমূহ:
শখের ছবিয়ালের টিপস-০১
শখের ছবিয়ালের টিপস-০২
শখের ছবিয়ালের টিপস-০৩
ডিজিটাল ছবি কী?
এক অর্থে প্রশ্নটি অর্থহীন, প্রায় সকলেই জানেন ডিজিটাল ছবি কী; অথবা না জানলেও কোথাও কোন অসুবিধা হচ্ছে না। তবে ডিজিটাল ছবি কী বিষয়টি ভালো করে জানার কিছু তাৎপর্য আছে। সে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়ের অংশবিশেষ আজকের লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করবো, বাকি অংশ পরের পর্বে।
যে অংশটি আজ বলবো তা হলো:
১। ডিজিটাল ছবি বা ইমেজ হলো অনেকগুলো পিক্সেলের সমষ্ঠি।
২। পিক্সেলগুলো সারি ও কলাম হিসাবে সাজানো থাকে।
৩। প্রতিটি পিক্সেলের নিজস্ব 'রঙ' (রঙ্গীন ছবির ক্ষেত্রে) এবং উজ্জ্বলতা (রঙ্গীন ও সাদাকালো উভয় ছবির ক্ষেত্রে) আছে।
পিক্সেল কী?
উপরের ছবিটি দেখুন। এরকম স্থির বা চলমান ডিসপ্লে বোর্ড প্রায় সবাই দেখেছেন। এখানে ছোট ছোট কিছু বাতি (LED = Light Emitting Diode) ব্যবহার করা হয়েছে, LED গুলো জ্বলে বা নিভে লেখার বা সহজ কোন ছবির প্যাটার্ন ফুটিয়ে তুলতে পারে। রাস্তায় বড় বড় বিজ্ঞাপনী টিভিগুলো কাছ থেকে লক্ষ্য করেছেন? সেখানেও এই রকমেরই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যদিও বহুরঙা। অথবা খেয়াল করে দেখুন, অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শত শত মানুষ রঙিন পোষাক, কার্ড, বা ছাতা দিয়ে বিভিন্ন প্যাটার্ন ও লেখা ফুটিয়ে তোলে! কিংবা বিভিন্ন রঙের ভাঙ্গা বাসনের টুকরো দিয়ে দেয়ালে মুর্যাল তৈরী করা হয়, তা দেখেছেন। এই সবগুলোরই মূলনীতি একই; ছোট ছোট ইউনিট সাজিয়ে একটি প্যাটার্ন গড়ে তোলা হয়, দূর থেকে দেখলে বোঝা যায়না যে এর মধ্যে ইউনিটগুলো আছে, কাছে আসলেই দেখা যায়। এরকম বিন্যাসকে বলা হয় মোজাইক।
ডিজিটাল ইমেজ বা ছবিও ঠিক এরকমই মোজাইক, অনেকগুলো ছোট ছোট বিন্দু দিয়ে গড়া, কাছে থেকেও ভালোমতো বোঝা যায় না বিন্দুগুলো, কারণ সেগুলো খুবই ছোট। তবে ছবিকে ডিজিটালী জুম বা ম্যাগনিফাই করলে সে বিন্দু বা ইউনিটগুলো আলাদা বোঝা যায়। এই প্রতিটি ইউনিটকে বলা হয় পিক্সেল (Pixel = Picture Element)। নিচের ফুলের ছবিটি দেখুন, এর আকার (dimension) ৫০x৫০ পিক্সেল -
এবার ছবিটিকে ১০ গুণ বড় করে দেখাচ্ছি -
লক্ষ্য করুন, ছোট ছোট অনেকগুলো রঙ্গীন বর্গাকার ইউনিট দিয়ে পুরো ছবিটি তৈরী। আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য নিচের ছবিটির সাথে তুলনা করে দেখুন, নিচের ছবিতে প্রতিটি পিক্সেলকে আলাদা আলাদা বোঝা যাবার সুবিধার জন্যই এরকম করা হয়েছে, বাস্তবে পিক্সেল এমন নয়।
এবার একটি মজার কাজ করুন: কী-বোর্ড থেকে Ctrl চেপে ধরে মাউজ হুইলটি ঘুরিয়ে আপনার ব্রাউজারকে ২০% জুম লেভেলে জুম আউট (ছোট) করে দেখুনতো উপরের দুটো ছবিকে আলাদা আলাদা বোঝা যায় কিনা! ২০% জুম অপেরাতে সম্ভব, ক্রোম বা ফায়ারফক্সে আমি পারি নি, ক্রোমে ৫০% ও ফায়ারফকক্সে ৩০% পর্যন্ত ছোট করা যায়, ২০% ছোট করতে না পারলে মজাটা টের পাবেন না। (এখনো যারা অপেরা ব্যবহার করছেন না, আরো বহুবিধ সুবিধার জন্যই এখনই অপেরাতে চলে আসতে পারেন।)
মেগাপিক্সেল কী?
মেট্রিক পরিমাপ পদ্ধতিতে মেগা = মিলিয়ন। কাজেই মেগাপিক্সেল মানে দশ লক্ষ পিক্সেল। আপনার ক্যামেরা যদি ৫ মেগাপিক্সেল হয়, তার অর্থ ক্যামেরাটি সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ পিক্সেল সম্বলিত ছবি তুলতে সক্ষম।
DPI কী?
DPI = Dots Per Inch, এক ইঞ্চিতে কতটি বিন্দু তার হিসাব। এটি প্রযোজ্য মনিটর ও প্রিন্টারের ক্ষেত্রে। লেজারজেট, ইংকজেট, এমনকি পুরনো ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারও যখন কোন কিছু প্রিন্ট করে ছোট ছোট বিন্দুর সাহায্যে তা করে থাকে। কোন প্রিন্টার একটি সুক্ষ্ম লাইন প্রিন্ট করার সময় লাইনটির প্রতি ইঞ্চিতে কতটি বিন্দু দিয়ে লাইনটি তৈরী করে তাকে ঐ প্রিন্টারের প্রিন্ট রিজোলুশান বলে, এবং তাকে DPI দিয়ে প্রকাশ করা হয়। কাজেই কোন প্রিন্টারের রিজোলুশান 300 DPI-এর অর্থ একটি লাইন প্রিন্ট করতে প্রিন্টারটি ৩০০টি বিন্দু বসিয়ে তা করে থাকে, কাজেই ১ বর্গ ইঞ্চি মাপের কোন ছবি প্রিন্ট করতে ৩০০x৩০০ = ৯০,০০০ বিন্দু প্রিন্ট করা প্রয়োজন। বুঝতেই পারছেন যে প্রিন্টারের রিজোলুশান যত বেশি DPI, সে প্রিন্টারের প্রিন্ট তত সুক্ষ্ম (ও হয়তো সুন্দর)। আজকাল বেশিরভাগ প্রিন্টারেরই একাধিক dpi সেট করার ব্যবস্থা আছে।
কোন সাইজের প্রিন্টের জন্য কত মেগাপিক্সেল ছবি দরকার?
সাধারণত ফটো প্রিন্টারে ৩০০ dpi তে প্রিন্ট নিলেই তাকে গ্রহণযোগ্য কোয়ালিটির মনে করা হয়ে থাকে। কাজেই একটি ছবি ৩০০ dpi তে দৈর্ঘ্যে ৫ ইঞ্চি প্রিন্ট নিতে হলে ৩০০x৫ = ১৫০০ টি বিন্দু বা পিক্সেল থাকা উচিত; বা উল্টোভাবে হিসাব করলে এভাবে করা যায়, কোন ছবির দৈর্ঘ্য ১৫০০ পিক্সেল হলে এবং তাকে ৩০০ dpi-তে প্রিন্ট করলে ছবিটি ১৫০০/৩০০ = ৫ ইঞ্চি হবে। আশা করি নিচের চার্ট থেকে বিষয়টি বোঝা যাবে।
ডিজিটাল ছবিটি খুব বড় সাইজের নয় অথচ একটু বড় প্রিন্ট চান, সেক্ষেত্রে ২০০ dpi ধরেও হিসাবটি করা যায়, তবে সেই প্রিন্টের মান ৩০০ dpi-এর চেয়ে কম হবে। কমার্শিয়াল ফটো প্রিন্টিং ল্যাব/মেশিনে প্রিন্টের জন্যও উপরের চার্টটি অনুসরণ করা যেতে পারে।
কত মেগাপিক্সেল ছবি দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে কত পিক্সেল?
উপরের চার্ট থেকে ছবির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ গুণ করে যেমন মেগাপিক্সেল পাওয়া গেছে, সহজ গাণিতিক বিপরীত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মেগাপিক্সেল থেকে ছবির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ কত পিক্সেল করে তা বের করা যায়। তবে সুবিধার জন্য সূত্রটি আমি দিয়ে দিলাম-
প্রস্থ = (৭৫০,০০০xমেগাপিক্সেল) এর বর্গমূল, এবং দৈর্ঘ্য = ৪xপ্রস্থ/৩
কাজেই ২ মেগাপিক্সেল ছবির প্রস্থ = বর্গমূল(৭৫০,০০০x২) = ১২২৪ এবং দৈর্ঘ্য = ৪x১২২৪/৩ = ১৬৩২ (দশমিকের পরের অংশ বাদ দিয়ে)। বাকি হিসাব নিচের চার্টে দেখুন-
Copyright 2010 সাইদুর রহমান চৌধুরী
Theme designed by Lorelei Web Design
Blogger Templates by Blogger Template Place | supported by One-4-All