মেয়েটি বললো, “কী, এবার অন্য কিছু ভাবো! দুই বছরতো পার হলো চাকুরি করছো!” ছেলেটিরও কোন ইচ্ছেই ছিলো না বিনা কারনে দেরী করার। এমন যদি হতো যে আরো কয়েক বছর অপেক্ষা করলে আহামরি কোন প্রতিষ্ঠা এসে যাবে তাও না হয় কথা ছিলো। গতানুগতিক পেশা, পতানুগতিকই উন্নতি হবে, অতএব শুভস্য শীঘ্রম।

যথাসময়ে মুরুব্বিরা পয়গাম নিয়ে গেলেন মেয়েটির বাড়ি। কোন ঝামেলা ছাড়াই আশির্বাদ করে এলেন মেয়েটিকে। বিয়ের দিন ধার্য হলো ১৪ই এপ্রিল। হাতে সময়ও বেশি নেই, প্রস্তুতি চলছে সাধ্যের মধ্যে জোরেসোরেই। ছেলেটির ভগ্নিপতিদের মধ্যে সবার ছোটজন হঠাৎ বেঁকে বসলেন বিয়ের তারিখ নিয়ে – “আরে ১৪ই এপ্রিলতো পয়লা বৈশাখ, পয়লা বৈশাখে আবার মানুষ বিয়ে করে নাকি?” আসল কথা হলো তিনি ব্যাবসায়ী মানুষ, ঢাকায় তাঁর ব্যাবসায়ী বন্ধুদের সাথে সেদিন অনেক পরিকল্পনা, সেসব বাদ দিয়ে বিয়েতে উপস্থিত থেকে দিনটি মাটি করতে চান না।



মুরুব্বীর ওপরও মুরুব্বী থাকে। তাঁকে বোঝানো হলো, সহসা আর ভালো ছুটি-ছাটা নেই, কার্ড ছাপা হয়ে বিলোনোও শুরু হয়ে গিয়েছে, অনেক ঝক্কি করে ক্লাব পাওয়া গেছে, বুকিংও দিয়ে ফেলা হয়েছে। কী আর করা, বেচারা দুলাভাই একমাত্র শ্যালকের বিয়ের জন্য সেবছরের নববর্ষ বিসর্জন দিতে রাজি হলেন। কিন্তু তিনি জানলেনও না, শ্যালকটিকে তিনি কত বড় উপহার দিতে সেদিন রাজি হয়েছিলেন! তার শ্যালক ছেলেটির জীবনে দিনটি শুধুই নববর্ষ নয়, সাথে যোগ হয়েছে ব্যাক্তিগত জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় দিবসটি পালন করার সুযোগ।

আজকাল সবাই জন্মদিন, বিয়েবার্ষিকী এসব খ্রীস্টীয় তারিখ ধরেই পালন করে, কিন্তু ছেলেটি ও মেয়েটি সিদ্ধান্ত নিলো তারা বিয়েবার্ষিকী বাংলা তারিখ ধরে পয়লা বৈশাখেই স্মরণ করবে। পালন বলতেতো কোন বিশেষ পার্টির দরকার নেই, বিয়ের দিনটিকে উৎযাপন করতে সারাদিন মেলায় মেলায় অনুষ্ঠানে অনু্ষ্ঠানে ঘোরো, সন্ধ্যায় হয়তো কোন রেস্তোরাঁয় খেয়ে বাড়ি ফেরো – এরচেয়ে বেশি উদযাপন আর কী হতে পারে?

বাংলাদেশে গতকাল ছিলো সেই দিনটি, পৃথিবীর ঠিক উল্টোদিকে এখনও দিনটি শেষ হয়ে যায়নি। শুধু জীবনেরই প্রয়োজনে গতকাল ছেলেটি ও মেয়েটি মেলায় মেলায় ঘুরতে পারেনি একসাথে। দিনটি অনেক আনন্দের, তবু এবছর আনন্দ ছিলো না অনেকটাই। এখনই সান্ধ্য আহারের সময় পৃথিবীর উল্টোদিকে, কিন্তু তা গ্রহন করতে হবে একা একা।

0 comments:

Post a Comment